এম. বশির উল্লাহ, মহেশখালী:
সালাউদ্দীন, হাত পা কিছুই নেই, এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, মহেশখালীতেই, আজকে দেখা হল এই কঠিন সংগ্রামী ছেলেটার সাথে!  সে লিখে পা দিয়ে, মুখের সাহায্যে পৃষ্ঠা উল্টায়, খাতা ভাজ করে! হাত পা ছাড়া দুনিয়াতে এসেও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রবল আগ্রহের জোরে পড়াশুনা চালিয়ে নিয়ে গেছে!
সে যে স্কুলে পড়ে (উত্তর নলবিলা হাই স্কুল) সে স্কুলের হেড স্যারের সাথে আমার দেখা হয় গতকাল দুপুরে, আমাদের মহেশখালীর একটা হাই স্কুলে (কালারমারছড়া); জেএসসি পরীক্ষার হল এর দায়িত্বে ছিলেন! কালারমারছড়া স্কুলের
আজকে বিকেলে গেলাম তার বাড়িতে! এ তো এক্সট্রা অর্ডিনারি, তার লেখার স্টাইল আর স্পীড দেখে আমি অবাক, ভিডিও করে নিয়েছি, কত কষ্ট করে তাকে লিখতে হয়! তারপরেও সে দমবার পাত্র নয়!
পরীক্ষায় হলে পরীক্ষক বলতেছিলেন, “তুমি চাইলে অন্যদের চাইতে বেশি সময় লিখতে পারো, আমাদের আপত্তি নাই!”
কিন্তু সে এক্সট্রা কোন সুবিধা না নিয়ে নির্ধারিত সময়েই লেখা শেষ করে খাতা জমা দিয়ে দেয়!
প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে বছরে ২ বার সে অল্প কিছু টাকা পায়, তা দিয়ে কোন রকমে খাতা-কলমের খরচটা হয়ে যায়!
আগামী বছর সে ক্লাস নাইনে উঠবে, খরচও বেড়ে যাবে, ৭ জনের সংসার দিনমজুর বাবার একক ইনকামেই চলে! এত বড় সংসার টেনে নিতে গিয়ে উনি হাপিয়ে উঠেছেন! এসবের বাইরে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ চালানোও উনার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়েছে! কিন্তু ছেলের যেমন অদম্য ইচ্ছাশক্তি,  বাবারও তেমন প্রবল স্পৃহা, উনি বলতেছিলেন- “মাশাল্লাহ আমার ছেলে অনেক কিছু পারে, কষ্ট হলেও তার পড়াশুনার জন্য যা যা লাগে দেওয়ার চেষ্টা করি! আমাদের আশেপাশে হাত পা-ওয়ালা অনেক সুস্থ ছেলেমেয়ের চাইতে আমার ছেলে পড়াশুনায় এগিয়ে আছে, অনেক গর্ব করি আমরা আমাদের ছেলেকে নিয়ে, দু-বেলা ভালমত খেতে পারি বা না পারি ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করিনা আমি! আমি মাঠে ঘাটে দিনমজুরি করে সংসার চালাই, আমার ছেলেমেয়েরাও এভাবে সংসার চালাবে তা আমি চাইনা, পড়ালেখা করে মানুষ হোক ওরা!”
যদিও সালাউদ্দীনের একটা বড় ভাই আছে, কিন্তু সে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে, কোন সাপোর্ট পাওয়া যায়না তার কাছ থেকে!
আমি তারে জিজ্ঞেস করলাম, “বড় হয়ে কি হতে চাও?” সে মুচকি হেসে জবাব দেয়, “আমার দ্বারা তো ডাক্তারি করা সম্ভব হবেনা, ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার! শিক্ষকতা পেশাটাও অনেক ভাল লাগে, কিন্তু সেটাও তো সম্ভব না আমার দ্বারা!”
– তাইলে কি করবা তুমি?
আর কোন জবাব নেই তার; মুচকি হাসে! এত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও সে পড়াশুনা করতেছে সেটাই তো অনেক বেশি! সবাইকে তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার হওয়ার জন্য পড়তে হয়না! সালাউদ্দীনের মত ছেলেরা যতটুক পারে পড়ুক, আমরা যারা সামর্থ্যবান আছি তারা যেন ওদের পাশে এসে দাড়াই, একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই!
হাত-পা ছাড়া নিজেকে একটু কল্পনা দেখুন, সালাউদ্দীনের জায়গা নিজেকে কল্পনা করতে কেমন লাগে দেখুন! কতই না ভাল ও সুখে আছি আমরা! আমাদের কি উচিত না এদের পাশে এসে দাঁড়ানো?
কারো যদি হেল্প করার আগ্রহ থাকে তবে তার ফ্যামিলির ফোন নং ও হেডস্যারের ফোন নং নিতে পারেন; আমার কাছে আছে!