রোহিঙ্গা সঙ্কট, সমাধানের উপায়

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০১৭ ০৭:৩৬ , আপডেট: ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:২৬

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন অধ্যাপক নাসির উদ্দীন

মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন:

বর্তমান বিশ্বের বর্বরতম ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়টির নাম হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যা। বিশ্বের ইতিহাসে যতগুলো নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে তার মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যা অন্যতম। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার (বার্মা)। মিয়ানমারের রাখাইন বা আরাকান অঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীই ইতিহাসে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর যাবত আরাকান মোটামুটি একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। স্বাধীন আরাকানের ম্রা্উক বংশের রাজা নরমিখলা প্রতিষ্ঠিত রাজধানী ম্রোহং এর বাংলা উচ্চারণ রোসাং। এ রোসাং এ দীর্ঘ কয়েকশত বছর ধরে বসবাসকারী মুসলমান জনগোষ্ঠীকে ইতিহাসে রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গা বলা হয়।
রোহিঙ্গাদের উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশ নিয়ে মতভেদ থাকলেও একথা অনস্বীকার্য যে, আরবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক কালে বাংলা এবং আরাকানে সমান্তরালভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে। খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা মহৎ-ইঙ্গ-চন্দ্রের (৭৮৮-৮১০ খ্রিঃ) রাজত্বকালে আরবীয় মুসলিম বণিকগণ বাণিজ্যিক নৌবহর নিয়ে আরাকানের আকিয়াব বন্দরসহ দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ক্যান্টন বন্দর পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও ইসলাম প্রচারের জন্য সফর করেন।

কথিত আছে যে, এসময় কয়েকটি আরবীয় বাণিজ্য বহর রামরী দ্বীপের কাছে বিধ্বস্ত হলে জাহাজের আরোহীরা ‘রহম (দয়া) রহম’ বলে চিৎকার করে সাহায্য কামনা করলে স্থানীয় জনগণ তাঁদের উদ্ধার করে রাজার কাছে নিয়ে যান। আরাকান রাজ তাঁদের বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত আচরণে মুগ্ধ হয়ে সেখানেই তাঁদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। আরবীয় ভাষায় অনভিজ্ঞ স্থানীয় লোকজন তাঁদেরকে ‘রহম’ জাতির লোক বলে মনে করত এবং পরবর্তীতে ‘রহম’ শব্দটি বিকৃত হয়েই রহম থেকেই রোহিঙ্গা হয়েছে বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। রোহিঙ্গা শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানামত পোষণ করেন।

কারো মতে, রোহিঙ্গা নামের উৎপত্তি রাখাইন শব্দ থেকে এসেছে। যথা- রাখাইন > রোয়াং > রোহিঙ্গা। রোয়াং তিব্বতি শব্দ, যার অর্থ আরাকান। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো রোয়াং ও রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গা দ্বারা আরাকান ও আরাকানের অধিবাসীদেরকে বুঝানো হয়।প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশরা আরাকান দখলের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা লগ্ন পর্যন্ত আরাকানের মুসলমানেরা বড় ধরণের দুর্ঘটনা ছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সর্ব প্রকার মৌলিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে আরাকানের মগ-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক অতি মধুর ছিল। এমনকি সেখানকার মগ সম্প্রদায়ের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক এত মধুর ছিল যে, স্থানীয় মগেরা ইয়োমা পাহাড়ের সুউচ্চ শৃংগের অপর পাড়ের বর্মী বৌদ্ধদের চেয়ে প্রতিবেশী আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বেশী আপন মনে করতো। আরাকানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেখানকার বৌদ্ধ শাসকেরা শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য প্রতিবেশী মুসলমানদের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী এমনকি সৈন্য-বাহিনীর প্রধান পর্যন্ত মুসলমানদের নিয়োগ দিয়ে নিশ্চিন্তে রাজকার্য পরিচালনা করতেন।

তৎকালীন আরাকানের প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমানেরা স্বর্ণযুগের সূচনা করেছিলেন। তাই আরাকানী রাজ সভা থেকে শুরু করে আধুনিক সভ্যতা বিনির্মানের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবদানকে কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। অথচ বর্তমান মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠী সেই আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বহিরাগত বা বাঙ্গালী অপবাদ দিয়ে নিজেদের শত বছরের বসত-ভিটা থেকে বিতাড়নের অমানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভাগ্যাহত এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে রাখাইনের অধিবাসী। আজ থেকে সাতশত বছর আগে ঠিক ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের ম্রাউক-উ বংশের রাজা নরমিখলা বহিঃশত্রুর আক্রমনে রাজ্য হারিয়ে বাংলার রাজধানী গৌড়ে আশ্রয় নেন। বাংলার মহানুভব শাসক জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ শাহ তাকে দীর্ঘ ২৪ বছর বাংলায় আশ্রয় দেন। ২৪ বছর বাংলায় থাকাকালীন নরমিখলা মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আল্লাহর একত্ববাদ ও কোরআন শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ নরমিখলাকে প্রায় দু’পর্বে ৫০ হাজার সৈন্য দিয়ে আরাকানের হারানো সিংহাসন পুণরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।

বিশেষ করে সেনাপতি সন্ধিখানের বীরত্বপূর্ণ অভিযানে সিংহাসন পুণরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীতে এসব বাঙ্গালী যোদ্ধারা আরাকানে নরমিখলার সেনাবাহিনী এবং রাজকার্য পরিচালনায় স্থায়ীভাবে আরাকানে বসতি স্থাপন করেছিল। সেনাপতি সন্ধিখান এসময় আরাকানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, যা ইতিহাসের প্রসিদ্ধ ‘সন্ধিখান’ মসজিদ নামে পরিচিত। বর্তমানে মসজিদটি বর্মী সামরিক বাহিনী ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এমনকি আরাকানের অনেক প্রাচীন মুসলিম নিদর্শন সেখানকার সরকার ধর্মীয় কিংবা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ এক সময় আরাকানের বৌদ্ধ শাসকেরা নিজেদের বৌদ্ধ নামের পাশাপাশি একটি ইসলামী নাম ধারণের প্রবনতা বজায় রেখেছিলেন। কথিত আছে রাজা নরমিখলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান শাহ নাম ধারণ করেন।

১৪৩০ -১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দু’শো পনের বছর যাবত স্বাধীন আরাকানের প্রায় সতের জন শাসক বৌদ্ধ নামের সাথে একটি করে মুসলমান নাম ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এসময় তারা আরাকানে প্রচলিত মুদ্রায় এক পৃষ্ঠে ফারসী অক্ষরে পবিত্র কলেমা ও অপর পৃষ্ঠে মুসলমান নাম ব্যবহার করতেন। আরাকানের স্বাধীন রাজাগণ তাঁদের নিজস্ব সভ্যতা, রাষ্ট্রনীতি ও আচার-ব্যবহারের চেয়ে মুসলমানদের সভ্যতা, রাষ্ট্রনীতি ও আচার-ব্যবহারকে অনেকাংশে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন। আরাকানের শাসকদের সাথে বাংলার মুসলমান রাজশক্তির অনেক ক্ষেত্রে বিরোধ থাকলেও মুসলমান জাতির প্রতি কিংবা ইসলাম ধর্মের প্রতি তাঁদের কোন বিরোধ বা বিরাগ ছিল না। তাই আরাকানের রাজারা তাদের দেহ রক্ষী বাহিনী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার পদ পর্যন্ত মুসলমানদের হাতে সমর্পন করেছিলেন। এজন্য ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠিত আরাকানের শাসন কালকে অনেক গবেষক মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেছেন।

আরাকানের রাজ দরবার ছিল মুসলিম অমাত্য, কাজী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। রাজনীতি, সমরনীতি, দরবারের আদব কায়দায় ইসলামী রীতি-পদ্ধতি অনুসৃত হতো।আরাকানী শাসকেরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলিম অমাত্যবর্গ ছাড়াও তাদের আর একটি বড় অবদান হলো তারা মুসলিম কবি সাহিত্যিকদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিমূল শক্ত করেছিলেন। বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিকেরা আরাকান রাজ সভায় অথবা অমাত্য সভায় বাংলা সাহিত্য চর্চা করে বাংলা ভাষাকে উন্নত ও সমৃদ্ধি করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। সপ্তদশ শতকে মহাকিব আলাওল আরাকান রাজ সভার প্রধান কবি হিসেবে পদ্মাবতী কাব্য রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুদীর্ঘকাল ব্যাপী মগ-মুসলমানদের মাঝে বিরাজমান সামাজিক সম্পর্ক ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বর্মী রাজা ভোদাপার্য়া কর্তৃক আরাকান দখলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিনের দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টের পাশাপাশি আরাকান হারায় তার দীর্ঘ দিনের স্বাধীনতা। বর্মীরাজ কর্তৃক আরাকান দখলের মধ্য দিয়ে শুধু আরাকানের রোহিঙ্গারা নয় সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগেরাও নির্যাতিনের শিকার হয়ে পার্শ্ববর্তী ব্রিটিশ শাসিত বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তখনকার আরাকানের ক্ষমতাচ্যূত রাজা হ্যারির এক মাত্র পুত্র সিন পিয়ান (কিং বেরিং) বাংলাদেশে অবস্থান করে দখলদার বর্মী রাজার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশদের অসহযোগিতার কারণে তার বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয় এবং তাদের পক্ষে আরাকানের হারানো স্বাধীনতাও পুণরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বোদাপায়ার অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা আরাকানের জনগোষ্ঠীর অনেকে বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালী সহ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এখনও বসবাস করতেছে। অন্য দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বাঁশখালী সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বংশধরেরা এখনো বসবাস করছে।প্রথম মহা যুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বিরোধী আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠলে তার প্রভাব বার্মাতে এসে পড়ে। এসময় বার্মার তাকিন পার্টি আরাকানের বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে মগ-মুসলমানদের মধ্যে স্থায়ী বিভেদ সৃষ্টি করে স্বাধীনতা উত্তর আরাকানকে বর্মীভুক্ত করার কৌশল গ্রহণ করে। তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষের পাশাপাশি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মগদের মাঝে স্থায়ী ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান আছে।

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ভারত শাসন আইন থেকে বার্মাকে পৃথক করে দিলে আরাকান সহ বার্মার বৌদ্ধরা প্রশাসনিক কর্মকান্ডে অনেকটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ফলে স্থানীয় বৌদ্ধদের মনে ভারত এবং বাঙ্গালী বিরোধী মনোভাব জাগ্রত হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আরাকানে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। যে দাঙ্গায় প্রায় ত্রিশ হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের প্রাক্কালে আরাকানে মগ-মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ আরও প্রবল আকার ধারণ করে। এসময় বার্মার জাতীয়বাতাদী নেতারা জাপানের পক্ষাবলম্বন করে। পক্ষান্তরে তারা বার্মার স্বাধীনতাকে এক প্রকার রুদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে নিয়েছিল। অন্যদিকে আরাকানের রোহিঙ্গারা ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে বার্মার স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জান-মাল এবং জীবনকে উৎসর্গ করেছিল। কেননা ব্রিটিশরা রোহিঙ্গাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিল আরাকান থেকে জাপানীদের বিতাড়িত করতে পারলে রোহিঙ্গাদেরকে উত্তর আরাকানে আলাদা স্বায়ত্বশাসন সহ অঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হবে। ব্রিটিশদের কথায় আস্থা স্থাপন করে রোহিঙ্গারা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জাপানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে আরাকান থেকে জাপানীদের বিতাড়িত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু আরাকানে মগ-মুসলমানদের দীর্ঘ দিনের সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাপানীরা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে সাময়িক কালের জন্য জয়লাভ করলে আরাকানের মগেরা জাপানীদের অস্ত্র সহযোহিতা নিয়ে আরাকানে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়, যা ইতিহাসে ‘৪২ এর ম্যাসাকার’ নামে কুখ্যাত। এই হত্যাযজ্ঞে প্রায় একলাখ আরাকানীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এবং অসংখ্য মানুষকে আহত বা চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হয়। এসময় বর্মীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে ভারতীয় বা বিদেশী আখ্যায়িত করে ‘কালাস’ বলে আরাকান থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করে। ফলে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আরাকানের মগ-মুসলমানদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্পর্ককে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয় এবং পরস্পরের প্রতি গভীর অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি করে, যার প্রভাব আরাকানে দু’সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়।ব্রিটিশরা বার্মার স্বাধীনতার প্রশ্নে সকল জাতিগোষ্ঠীর সম্মতির কথা বললে তাকিন পার্টির প্রধান হিসেবে জেনারেল অংসান বার্মার সকল নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সম্মতি আদায়ের জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে ঐতিহাসিক প্যানলং সম্মেলন আহবান করে। এতে সকল জাতিগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানালেও একমাত্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

অথচ আরাকানে শত বছর ধরে বসবাসকারী সবচেয়ে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। মূলত জাতিগত বিদ্বেষ এবং আরাকানের রোহিঙ্গাদেরকে স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য বর্মীরা এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। তারপরও আরাকান এবং বার্মার অপরাপর মুসলমানেরা বার্মার স্বাধীনতার জন্য গঠিত Anti Fascist Peoples Freedom League (AFPFL) এর প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ব্যক্ত করেন। এসময় অংসান এর দক্ষিণ হস্ত হিসেবে পরিচিত মুসলমান নেতা সিয়াজী উ আবদু রাজ্জাক বার্মার স্বাধীনতার জন্য আরাকান সহ সমগ্র বার্মার মুসলমানদেরকে স্বাধীনতা আন্দোলনে  সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। প্যানলং সম্মেলনে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মতবিরোধের কারণে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে এক্ষেত্রে মুসলমান নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে আবদুল্লাহ নামক জনৈক মুসলিম বিচক্ষণ নেতা সকল জাতিগোষ্ঠীর প্রতি প্যানলং সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসময় আরাকান সহ বার্মার মুসলিম সংগঠন গুলো অঋচঋখ এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বার্মার স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্যানলং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারী বার্মা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

বার্মার স্বাধীনতার প্রাক্কালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা লাভে বিরোধিতা করলেও একমাত্র মুসলমানেরা ঐক্যবদ্ধভাবে বার্মার স্বাধীনতার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রদান করেছিলেন। এক্ষেত্রে Burma Muslims Congress (BMC)গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বার্মার স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা অংসান মুসলিম সংগঠন সমূহের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, BMC এর সক্রিয় সহযোগিতা না পেলে আমার পক্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে সফল হওয়া সম্ভব হতোনা’। অথচ স্বাধীন বার্মা ইউনিয়নের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা চলাকালে অংসান এবং আবদু রাজ্জাককে আততায়ীর গুলিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমনকি অংসানের প্রধান মুসলমান দেহরক্ষীকেও সেদিন স্বাধীনতা বিরোধীরা হত্যা করে। এভাবে আরাকান তথা বার্মার ইতিহাসে রোহিঙ্গা মুসলমানেরা স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করলেও আজকের বার্মা তথা মিয়ানমারের সরকার আরাকানের মুসলমানদেরকে নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে নিজেদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়নের জগন্যতম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

স্বাধীনতার পর উনু সরকার বার্মার সাধারন নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের তীব্র প্রতিবাদের কারণে পুণরায় রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে বাধ্য হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন সহ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছিল এবং এক্ষেত্রে আরকানে রোহিঙ্গারা কয়েক জন মুসলমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানোর সুযোগ লাভ করেছিল।

এসময় উনু সরকারের মন্ত্রী সভায় কয়েক জন মুসলমান মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এভাবে স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানেরা মোটামুটি নাগরিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ পেলেও আরাকানে রোহিঙ্গা বিরোধী কয়েকটি সশস্ত্র অপারেশন পরিচালনা করা হয়।

তার মধ্যে Burma Territorial Force (BTF) অপারেশন উল্লেখযোগ্য। এ অভিযানে উত্তর এবং দক্ষিণ আরাকানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এভাবে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্মী সামরিক সরকার রোহিঙ্গা বিরোধী কমপক্ষে এগারটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আরাকানের রোহিঙ্গাদের জীবনকে এক দূর্বিসহ অবস্থার মধ্যে নিপতিত করা হয়। এসমস্ত অভিযানে রোহিঙ্গাদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতনসহ হত্যাকান্ড সংগঠিত করে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। বার্মার স্বাধীনতার দশ বছর পূর্ণ না হতেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী স্বাধীনতা কিংবা স্বায়ত্বশাসনের জন্য সক্রিয় সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করলে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল নে-উইন এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে বার্মাকে আধুনিক পৃথিবীর একটি বর্বরতম দেশে পরিণত করেন। নে-উইন ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে সর্ব প্রথম আরাকানের রোহিঙ্গাদের উপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে চরম নির্যাতন শুরু করেন। নে-উইনের আমলে রোহিঙ্গা বিরোধী কয়েকটি ভয়াবহ সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার মধ্যে নাগাজিনকা, মাইয়াট, মেজর অংথান, সেব এবং সর্বশেষ নাগামিন বা কিংড্রাগন অপারেশন উল্লেখযোগ্য। বর্মী সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিটি অপারেশনে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে চরম নির্যাতনসহ দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বর্মী সামরিক সরকার জোর করে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করলে তৎকালীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্মী সরকারকে এক চরম পত্র প্রদান করলে বর্মী সরকার নিঃশর্তে আগত শরণার্থীদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। অনুরূপ ভাবে সামরিক সরকারের নির্যাতনের মুখে সবচেয়ে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে যার পরিমাণ প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার। কিন্তু এবারও তৎকালীন সরকার প্রধান জিয়াউর রহমানের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বর্মী সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরত নিতে বাধ্য হয়।রোহিঙ্গারা বর্মী সামরিক সরকার কর্তৃক প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতে থাকলে সত্তরের দশক থেকে রোহিঙ্গারা দাবী দাওয়ার প্রতি সোচ্চার হতে থাকে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র আন্দোলনের সূচনা করেন।

বিশেষ করে সচেতন শিক্ষিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্মী সরকারের বৈষম্য এবং নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন গঠন করে। যার মধ্যে Mojahid Movement Party, Rohingya Liberation Front (RLF), Rohingya Petriotic Front (RPF), Rohingya Solidarity Organization (RSO), Arakan Rohingya Independent Force (ARIF), Arakan Rohingya National Organization (ARNO) সর্বশেষ Arakan Rohingya Salvation Army উল্লেখ যোগ্য।

বর্মী সামরিক সরকার সত্তরের দশকে বিশেষ করে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে National Registration Card (NRC) তল্লাশীর অজুহাতে চরম ভাবে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু করে এবং একে মুসলিম নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। মিয়ানমারের সামরিক সরকার আরাকান থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের লক্ষ্যে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বার্মা নাগরিকত্ব আইন জারী করে রোহিঙ্গাদেরকে চুড়ান্ত ভাবে মিয়ানমারের নাগরিকত্বহীন নাগরিকে পরিণত করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের মৌলিক অধিকার সহ নাগরিক অধিকার। এমনকি রোহিঙ্গাদের উপর চলাচলের অধিকার থেকে শুরু করে বিবাহের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও শর্ত আরোপ করা হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও নানা রকম বিধি-নিষেধ জারী করা হয়। মূলতঃ সমগ্র আরাকানকে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থীদেরকে যথাযথ নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে বর্মী সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সহিত স্ব-দেশে ফেরত নিলেও প্রত্যাবর্তনকারী রোহিঙ্গাদের উপর পুণরায় অকথ্য নির্যাতন শুরু করা হয়। ফলে নির্যাতনের মুখে পুণরায় রোহিঙ্গারা ১৯৯১-৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। এসময় সা¤্রাজ্যবাদী বর্মী সরকার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিডিআর ক্যাম্প আক্রমণ করে দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরী করে। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক কুটনৈতিক প্রচেষ্টাসহ দুই দেশের মধ্যে শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যায়। সে সময় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার শরণার্থীদের মধ্য থেকে ত্রিশ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে এখনও অবস্থান করছে।
নে-উইনের সামরিক সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান তথাকথিত সূচির গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও রোহিঙ্গারা ইতিহাসের ভয়াবহতম নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বর্মী সরকারের ধারাবাহিক নির্যাতনে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সর্বশেষ গত ২৫ আগষ্ট ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে রোহিঙ্গারা পুণরায় বর্মী সরকারের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে যার ধারাবাহিক আগমন এখনও অব্যাহত আছে। বর্মী সরকার কথিত রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন ‘আরসা’ কর্তৃক বর্মী সীমান্ত চৌকিতে আক্রমণের অজুহাত তুলে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সামরিক অভিযান শুরু করে। বর্মী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এ সমারিক অভিযানকে জাতিসংঘ সহ আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশ্বের সচেতন জনগোষ্ঠী একে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করছেন।সূচির নেতৃত্বে বর্মী সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে আরাকানের শত বছর ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বার্মা সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এমনকি এখনো আরাকান থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। ১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে রোহিঙ্গারা আগমন করলেও সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে রোহিঙ্গারা বর্মী সরকারের অবর্ণনীয় নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ আগস্ট থেকে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতনে প্রায় ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গার বাড়ী-ঘর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম বিধ্বস্ত কিংবা বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। অসংখ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি দুধের শিশুকে পর্যন্ত জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে ইতিহাসের বর্বরতম নজির স্থাপন করা হয়েছে। অসংখ্য যুবতী নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে কিংবা ধর্ষণ শেষে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। অতীতে বর্মী সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষম না হলেও বর্তামন রোহিঙ্গা সঙ্কট আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে গভীর ভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। কেননা সমকালীন বিশ্বে যতগুলো জাতিগত সঙ্কটে বিশ্ব নিপতিত হয়েছে তার মধ্যে বর্তমানে বর্মী সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধন প্রক্রিয়াকে বিশ্ব সম্প্রদায় সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে জঘন্যতম জাতিগত নিপীড়ন কিংবা গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির পরিদর্শনকারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদল সমূহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত অপরাধকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে মালয়েশিয়ায় আর্ন্তজাতিক গণ আদালতে মিয়ানমার সরকার ও সেদেশের সেনাবাহিনীকে গণহত্যার দায়ে সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ইতিমধ্যে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এবং প্রতিবাদের কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে পর পর তিনবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে অবিলম্বে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ অনেক উন্নত রাষ্ট্র রোহিঙ্গা প্রশ্নে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায় সহ বিশ্বের শান্তিকামী জনগোষ্ঠী সহ আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহ বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
বর্তমান মিয়ানমার দীর্ঘ সামরিক শাসনের ফলে দেশটির জনসাধারনের মধ্যে বেশ কিছু মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে যা একান্ত ভাবে তাদের নিজেদের এবং সর্বসত্তা দিয়ে তারা সেটি বিশ্বাস করে। মিয়ানমারের সরকার থেকে সাধারণ বর্মী জনগণের মনোভাব হচ্ছে ‘বার্মা শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য’। এই উগ্রবাদী মনোভাব সামরিক সরকারের আমলে আরও প্রবল আকার ধারণ করে, ফলে সমগ্র বার্মায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বর্মী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা করে, যা বর্তমান পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় অব্যাহত আছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা সশস্ত্র আন্দোলন পরিহার করে বার্মায় শান্তিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বসবাসের নিশ্চয়তা চাইলেও তাদেরকে সেই সুযোগ প্রদান করা হয়নি। এমনকি তাদেরকে নাগরিকহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করে আরাকানকে রোহিঙ্গা মুক্ত এলাকা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সংবিধান মোতাবেক নিজেই নিজের প্রতি দায়বদ্ধ। কার্যত তাকে ষ্টেট কাউন্সিলর বা প্রেসিডেন্টের কাছে কোন ধরনের জবাবদিহি করতে হয় না। সংবিধানমতে সেনাপ্রধান অনেক ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। বর্তমান সংসদের ২৫% আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের মত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে ন্যস্ত করা হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেটা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মিয়ানমারের বর্তমান কথিত গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে এখানে একক ভূমিকা রাখা বাস্তবিকপক্ষেই কঠিন। এ সঙ্কটের কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে হলে সঙ্কটের গুরুত্ব মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকেও বুঝতে হবে। মূলতঃ বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য সেখানকার অভ্যন্তরীণ অদ্ভূত শাসন ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর একক আধিপত্য এবং রাখাইনের বৌদ্ধদের রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনা অনেকাংশে দায়ী। বর্তমানে উগ্রবাদী বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগঠন মা বা থা আরাকান থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে সমগ্র বার্মায় রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উগ্রবাদী কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা আসিন উইরাথু মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম এই বৌদ্ধ সন্যাসীকে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মূখ’ নামে অভিহিত করেছেন।রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানঃবর্তমানে রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ঘটনা হিসেবে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সচেতন জনগোষ্ঠী এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়ছে বাংলাদেশ। কারণ নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাঁচার জন্য পার্শ¦বর্তী স্বধর্মীয় মুসলিম দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বিশ্বের অন্যতম ঘন বসতি পূর্ণ দেশ হিসেবে এ বাড়তি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ এই অনাকাঙ্খিত সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সাথে একান্তভাবে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের নাগরিকদের অবিলম্বে সম্মানের সহিত নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। পদক্ষেপটি ইতিবাচক হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে মিয়ানমারের অতীত ইতিহাস। কারণ মিয়ানমার সরকারের অতীতের দ্বি-পক্ষীয় চুক্তি অমান্য করার প্রবণতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তাই বর্তমানে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের জন্য দ্বি-পক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের সম্যক বিশ্লেষণধর্মী উপলদ্ধি থাকা প্রয়োজন। মিয়ানমারের শাসন ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসন প্রণালী থেকে একদম আলাদা। প্রখ্যাত ইংরেজ সাংবাদিক রুডইয়ার্ড কিপলিং বলেছেন, ‘এই হচ্ছে মিয়ানমার, যা আপনার চেনাজানা যে কোন দেশে থেকে স্বতন্ত্র’। মূলত: দেশটির অদ্ভূত শাসন ব্যবস্থা এক্ষেত্রে বিশ্লেষণের দাবী রাখে। সম্প্রতি দেশটি গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করলেও মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক শাসনের ভিত্তি এখনও মজবুত হয়নি। সেনাবাহিনী এখনো সেখানে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এছাড়া দেশটির জনসাধারণের উপর বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং জ্যোতিষীদের যতেষ্ট প্রভাব রয়েছে। দেশটির রাজনীতির গতিশীলতা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট বুঝতে হলে সরকার, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য প্রভাবকের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে হবে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশকেও প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্কসহ সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। বর্তমানে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুধু মিয়ানমার বা বাংলাদেশের কিংবা আঞ্চলিক সঙ্কট নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সঙ্কটে রূপ লাভ করেছে। সুতরাং এই রোহিঙ্গা সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

রোহিঙ্গ সঙ্কট সমাধানের উপায় হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়াদি বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন-১) রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য জাতিসংঘকে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে।২) কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।৩) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমস্যা সমাধানের জন্য পেশকৃত ৫ দফা মিয়ানমার সরকারকে আমলে নিতে হবে।৪) মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে।৫) মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াতসহ মৌলিক অধিকার সমূহ ফিরিয়ে দিতে হবে।৬) মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সহ আর্ন্তজাতিক ভাবে গণহত্যার দায়ে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।৭) রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নিপীড়নের দায়ে প্রয়োজনে মিয়ানমারের প্রতি আর্ন্তজাতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে।৮) বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।৯) সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।১০) চীন, রাশিয়া এবং ভারতকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা কিংবা সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।১১) রাখাইনে মগ-মুসলমানদের পারস্পরিক আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপনে মনযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে গুরুত্ব দিতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়াদি বিশ্লেষণ করলে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আরাকান বা রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে সর্বাগ্রে আন্তরিক এবং সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কার্যকর সমাধান করতে ব্যর্থ হলে মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে যা অত্র অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মঙ্গলজনক হবে না। সুতরাং মিয়ানমার কর্তৃক সৃষ্ঠ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে মিয়ানমার ব্যর্থ হলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে বাধ্য করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক
প্রভাষক,  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কক্সবাজার সিটি কলেজ এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক পিএইচ.ডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
প্রবন্ধটি শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে কক্সবাজার সিটি কলেজ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত হয়। 
সেমিনারটি কক্সবাজার ইতিহাস গবেষণা পরিষদ আয়োজন করে। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল কক্সবাজার সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ। 
সেমিনারে সভাপতিত্বে করেন কক্সবাজার  ইতিহাস গবেষণা পরিষদের সভাপতি ও মোস্তাফিজুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ  হেছামুল হক।
বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিংঅং, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কক্সবাজার সিটি কলেজের  উপাধ্যক্ষ আবু মো. জাফর সাদেক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আকতার চৌধুরী, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শারমিন ছিদ্দিকা, পরিচালনা পরিষদের সদস্য এড. ফরিদুল আলম, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল।