এএইচ সেলিম উল্লাহ:
মিয়ানমার থেকে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নানামুখি সেবা দিচ্ছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন, শিশুদের চিত্তবিনোদন ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশু বান্ধব কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি সংস্থাটির পক্ষ থেকে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, পরিষ্কার পরিচ্ছনতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পে ২৩০টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে উখিয়ার জামতলীর বাঘঘোনা এলাকায় বাস্তবায়নাধীন সার্বিক কার্যক্রম পরিদশন করেছেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ এর সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী রফিকুল আলম। তিনি মেডিকেল ক্যাম্প ও শিশু বান্ধব কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। কথা বলেন রোহিঙ্গা শিশুদের সাথে।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী রফিকুল আলম বলেন, ‘ঢাকা আহছানিয়া মিশন জনগনের সেবায় নিয়োজিত। তারা বিভিন্নভাবে কাজ করে। যারা মিয়ানমার থেকে এসেছে তারা নির্যাতিত, নানাভাবে কষ্ট পেয়েছে, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে । তাদের সেবা দেওয়া, দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। আমরা সেই সেবা দিতে চাই। আর্তমানবতার সেবা দিয়ে একটি সুখী সমাজ গড়ে তুলতে চাই। ইতোমধ্যে সরকার যে দায়িত্ব নিয়েছে তা ভালভাবে পালন করেছে। সরকারের এই ব্যবস্থাপনায় আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। আমরাও সরকারের সাথে কাজ করতে চাই। এখানে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো মেনেই আমরা সরকারের সাথে কাজ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্তমানবতার সেবায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে জামতলী বাঘঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপিত মেডিকেল ক্যাম্পে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহ সকলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ১২ জনের একটি মেডিকেল টীম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে ১৫০-২০০ জন রোহিঙ্গা।’
তিনি জানান, ক্যাম্পে প্রাথমিক পর্যায়ে ২শ শিশুকে তালিকাভুক্ত করে শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানসিক বিকাশে সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পটিতে ১হাজার ৬শ শিশুদের জন্য ৮টি শিশু বান্ধব কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চলছে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম. এহছানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন মুখী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে একটি মাল্টিপারপাস ক্যাম্পাস আমরা ডেভেলপ করেছি। তাছাড়াও রাখাইনে বিভিষীকায় সৃষ্ট মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শিশুদের জন্য চিত্ত বিনোদন, খেলাধুলা সহ প্রতিভা বিকাশের সুব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, পরিষ্কার পরিচ্ছনতা বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চুড়ান্ত হয়েছে। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জামতলী ক্যাম্পে ২৩০টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনার রয়েছে। সংস্থার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, বাঘঘোনা মেডিকেল ক্যাম্পে বর্তমানে ৩ জন মেডিকেল অফিসার, ৪ জন প্যারামেডিক, ১ ল্যাব টেকনিশিয়ান, ১ জন সাইকো স্যোশাল কাউন্সিলর, ২ জন মুবিলাইজার সহ ১২ জনের একটি মেডিকেল টীম কাজ করছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের চেয়ে ১৯% বেশি এইচআইভি ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত। তাই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এইচআইভি পজেটিভদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং যারা নেগেটিভ তাদের এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি আমরা। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এখানে আরো দুইটি স্যাটেলাইট ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে আরও ৪টি স্যাটেলাইট ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম. এহছানুর রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক ইকবাল মাসুদ, শিক্ষক বিষয়ক পরিচালক সাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফারুক, প্রোগ্রাম অফিসার এজেএম শাকিল ফেরদৌস, ম্যানেজার শিপ্লব চাকমা সহ মিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে বিমানযোগে কক্সবাজার যান ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট এবং দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ এর সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী রফিকুল আলম।