মাহ্ফুজুল হক

আজ দিকে দিকে মানুষে মানুষে যে হানাহানি, ঝগড়া-ফাসাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ তার অন্যতম মূল হলো জাতি ভেদ তথা উচ্চ নীচ শ্রেণি ভেদ। এই বিভেদ মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা সৃষ্টি করেননি। মানুষ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে এই বৈষম্যের প্রাচীর তৈরি করে নিয়েছে। মানুষের মধ্যে মজ্জাগত একটি ইগো (ঊমড়) বা অহম সচরাচর কাজ করে। এই যে অহংবোধ বা আতœম্ভরিতা বা অহংকার তা একটি শয়তানি বদগুণ। অহংকার করার অধিকার ও যোগ্যতা একমাত্র ¯্রষ্টারই রয়েছে। মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা আদি মানব আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করার পর তাঁকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিলেন। অতঃপর ফিরিশ্তাদের আদেশ করলেন আদমকে সিজদা করার জন্য। তখন ফিরিশ্তাকূল অবলিলায় তাঁকে সিজদা করলেন ইবলিশ শয়তান ব্যতীত। সে যুক্তি দেখালো যে, যেহেতু আদম মাটির তৈরি আর সে (শয়তান) আগুনের তৈরি, তাই সে আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠতর।

মানুষ তার নিজস্ব পরিমন্ডল থেকে চিন্তা করে- তার প্রতিবেশি বা জানা শোনা অমুক ব্যক্তি বিদ্যা-বুদ্ধি, ধন-দৌলত, নাম-যশ, পারিবারিক ঐতিহ্য, সামাজিক অবস্থান, আতœীয়-পরিজন ইত্যাদি বিবেচনায় তার চেয়ে হীন বা তার চাইতে উৎকৃষ্ট। মানুষের এই ‘বোধ’কে ইনফেরিয়রিটি (ওহভবৎরড়ৎরঃু) অথবা সুপেরিয়রিটি (ঝঁঢ়বৎরড়ৎরঃু) কমপ্লেক্স (ঈড়সঢ়ষবী) বলা যায়। নিজেকে অপরের তুলনায় নীচ বা উচ্চ ভাবা এবং তদনুযায়ী কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া এক ধরণের হীনমন্যতা বা উঁচুমন্যতা বোধ সঞ্জাত। এটি এক প্রকার মনরোগ বা মানসিক বিকার। সম্ভবতঃ প্রায় সকল মানুষই কোন না কোনভাবে এই রোগের শিকার। বিষয়টি এরূপ, কোন একজন ব্যক্তির প্রসঙ্গ এলেই সে তাৎক্ষণিকভাবে ভেবে নেয়- ও, অমুক ? সে তো এই এই দিক দিয়ে আমার চেয়ে হীন বা উন্নত। বিশেষ করে যদি বিষয়টি হয় বিবাহ-শাদী বা ঝগড়া-বিবাদ কিংবা শত্রুতা-মিত্রতা সংক্রান্ত। এহেন শ্রেণি ভেদ মানুষে মানুষে তো হয়ই, এমনকি তা সহোদর ভাইয়ে ভাইয়েও হয়। যদি আপন ভাইটি তার চাইতে উপরোল্লিখিত এক বা একাধিক বিষয়ে উন্নত বা অনুন্নত হয়। প্রথমতঃ বিষয়টি তার মনো রাজ্যে ক্রিয়া করে। পরে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তা সে তার অতি আপন জনের (স্ত্রী-পুত্র-কন্যা) কাছে প্রকাশ করে। অতঃপর তাদের মধ্যেও উল্লিখিত ব্যক্তি সম্বন্ধে একটি ধারণা তৈরি হয়। আরো আরো পরে উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে (ক্ষোভ, ভক্তি বা করুণা) তা ধীরে ধীরে তাদের মাঝে থিতু হয়। এক পর্যায়ে মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে এবং এক সময় তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ আরো অনেকে জেনে যায়। ব্যাস্। এইভাবে উভয়ের মধ্যে বা উভয় পরিবারে একটি বিভাজন রেখা তৈরি হয়ে যায়। বিষয়টি যদি পরিবার ছাড়িয়ে সমাজ বা সম্প্রদায় বা গোত্র বা ধর্মীয় গোষ্ঠী বা জাতি অথবা দেশব্যাপী হয় তবে তার রূপ হয় বহুপাক্ষিক-বহুমাত্রিক, তার ব্যাপকতা বা ব্যাপ্তি হয় বহু বিস্তৃত এবং এর ক্ষতিকর রূপ হয় ব্যাপক বিধ্বংসী।

মানুষের গায়ের রং, ধর্মাচার, ক্ষমতার দাপট বা শক্তির মদ-মত্ততা, জাত্যাভিমান, সাহিত্য-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার, ভাষা তথা ভাষার মার্জিত রূপ ইত্যাকার বিষয়গুলো মানুষের মাঝে আতœম্ভরিতা তথা অহমের জন্ম দেয়। খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সুন্দর দেহ সৌষ্ঠব ও রূপ লাবণ্য বিশিষ্ট নর বা নারী নিজেকে কেমন যেন আলাদা আলাদা ভাবে। শুধু ভাবে না- ভাব-ভঙ্গিমা, চলন-বলন, কাজ-কর্মের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশও করে। শুধুমাত্র গাত্র বর্ণের কারণে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা মানুষের মাঝে যে বিভাজন সৃষ্টি করেছিলো তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। এই বর্ণবাদ সৃষ্টিতে বর্তমান সভ্যতার ধ্বজাধারী ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরাই একমাত্র ও শুধুমাত্র দায়ী। মানুষকে শাসন-শোষণ, গোলামী-দাসত্ব, অচ্ছুৎ ও নীচ শ্রেণি সৃষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই সাদা চামড়ার মানুষগুলোই অগ্রণী। তাদের এহেন মানবতা বিরোধী তৎপরতার কথা আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকা-এশিয়ার তৎকালীণ উপনিবেশগুলোর পথে পথে আজো রণিত-অনুরণিত হয়। তাদের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে লক্ষ কোটি বণি আদম অবর্ণনীয় লাঞ্জনা, নিগ্রহ ও খুন জখমের শিকার হয়েছেন। বর্ণবাদীদের অসভ্যতা ও বর্বরতা নিয়ে কতো শত গ্রন্থ, কাব্য-মহাকাব্য রচিত হয়েছে, কতো চলচ্চিত্র-নাটক-পালা নির্মিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই।

ধর্মাচারের অহম অতীব ধ্বংসাতœক, দিগন্তবিস্তৃত, শত শত শতাব্দীব্যাপী (মিলেনিয়াম) বিরাজিত। প্রায় প্রতিটি ধর্মের অনুসারীরা অপরাপর ধর্মের অনুসারীদের হীন, নীচ ও অচ্ছুত জ্ঞান করেছে প্রতিনিয়ত। প্রতিটি ধর্মাচারই মানুষের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি করে রেখেছে। সবাই ধরে নিয়েছেন তাদের ধর্মই সবার সেরা, ওই ধর্মের অনুসারীরাই শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং স্বভাবতঃই অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের তুলনায় হীন, অপাংক্তেয়। ধর্মীয় কারণে নিগ্রহের ধারাবাহিকতা সেই যে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু হয়েছিল তা কখনো থেমে থাকেনি। ইহুদীবাদী-জায়নবাদীরা পরবর্তী প্রত্যেক নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ থেকেছে এবং সর্ববিধ উপায়ে বিরোধিতা ও খুন খারাবী করেছে। এই ভারতীয় উপমহাদেশে পৌত্তলিক আর্যরা বৌদ্ধ দ্রাবিড় সম্প্রদায়ের উপর যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তা ইতিহাসের উপজীব্য। ওই সময় প্রায় সমগ্র ভারত থেকে দ্রাবিড়রা বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাই তো আমরা দেখি, বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি ও প্রবর্তন ভারতে হলেও তা বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ হয় চীন, বার্মা, থাইল্যান্ড তথা সমগ্র ইন্দোচীন, দূর প্রাচ্যের দেশ জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে।

খ্রিস্টবাদীরা শুধুমাত্র ধর্মীয় উন্মদনার বশবর্তী হয়ে ক্রুসেডের (ধর্ম যুদ্ধ) নামে দুইশতাধিক বছরব্যাপী (১০৯৫-১২৯১ সাল) মুসলিম বিরোধী একতরফা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। তৎকালীণ খ্রিস্টান পুরোহিতরা সমগ্র ইউরোপজুড়ে জোরেশোরে ইসলাম বিরোধী প্রচার প্রপাগান্ডা চালায়। যার ফলশ্রুতিতে পঙ্গপালের মতো ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা হাজার হাজার যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিন উপকূলে আছড়ে পড়ে। পবিত্র নগরী জেরুজালেম, বেথলেহেম প্রভৃতি উদ্ধারের নামে বহিরাগত ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা সমগ্র ফিলিস্তিন উপত্যকা তছনছ করে ফেলে এবং ওখানকার আদি জনগোষ্ঠী মুসলিমদেরকে তাদের ঘরে ঘরে হানা দিয়ে হত্যা করে। ক্রুসেডারদের ওই বর্বরতার কথা ঢাকা দিতেই তারা হালে মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে ‘জিহাদী জিহাদী’ জিগির তোলে সর্বত্র তোলপাড় করছে। খ্রিস্টানদের দ্বারা মধ্যযুগে শুরু করা ক্রুসেড আজ অবধি চলমান আছে তবে তা ভিন্ন আঙ্গিকে, ছদ্ম নামে। আজ দিকে দিকে দেশে দেশে জিহাদী, জঙ্গী, সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী প্রভৃতি নামে মুসলিম বিরোধী যে অভিযান চলছে তা ওই ক্রুসেডেরই নবরূপ, আধুনিক সংস্করণ। সুচতুর খ্রিস্টানরা তাদের ক্রুসেড থেকে সরে যায়নি। বরং আমরা অবুঝ মুসলিমরা স্বকীয়তা ভুলে তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছি।

সেই আঠার শতক থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলমান আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মুসলিম বিরোধী নৃশংসতার জ্বলন্ত প্রমাণ। বার্মার বৌদ্ধরা তো খোলাসা করেই বলে বেড়াচ্ছে যে, বার্মা বৌদ্ধদের দেশ। সেখানে মুসলমানদের কোন স্থান নাই। বৌদ্ধদের দেশে মুসলমানদের ঠাঁই হবে না। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অহিংসার ধ্বজাধারী বৌদ্ধদের কৃত মানবতা বিরোধী নিষ্ঠুরতার নজির বৌদ্ধরা স্বয়ং। এর দৃষ্টান্ত দ্বিতীয়টি নাই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ভাষায়, পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করার মতো একটি জাতিকে সমূলে নিধন করার দৃষ্টান্ত হচ্ছে সম্প্রতি আরাকানে ঘটমান রোহিঙ্গাদের প্রতি বর্মী বৌদ্ধদের নৃশংসতা। বৌদ্ধরা অহিংসার ধ্বজা উড়ালেও বাস্তবে তারা যে বন্য জন্তুর চেয়েও হিং¯্র, ক্ষ্যাপা কুকুরের চেয়েও উগ্র, রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ারদের চেয়েও নৃশংস তার উদাহরণ তারা শুধু এইবার নয়, বার বার বহুবার দিয়েছে। সমগ্র বৌদ্ধ দুনিয়া যে বর্মী খুনী বৌদ্ধদের নৃশংসতার সহযোগী তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী একটি দেশও বর্মীদের এহেন বর্বরতার নিন্দা না করে বরঞ্চ সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে। বর্মী বৌদ্ধরা যে অতি উঁচু মাত্রার সন্ত্রাসী, জিঘাংসু ও খুনী স্বভাবের তা তাদের দৈহিক আকৃতি, চেহারায় ফুটে থাকা হিং¯্রতা, ‘এক কুইপ্পা মগ’ নামাঙ্কিত স্বভাব থেকেই বোঝা যায়। কুৎসিত, জঘন্য, হিং¯্র প্রভৃতি বিশেষণগুলো যে সমস্ত মানুষের বেলায় প্রযোজ্য তা প্রকৃতই ‘মগ’ নামক বৌদ্ধদের বেলায় পুরোপুরি সত্য।

ক্ষমতার দাপট বা শক্তির মদ-মত্ততার অন্যতম নজির হলো আফগানিস্তানের মতো একটি গরিব মুসলিম দেশের উপর পরিচালিত ইঙ্গ-মার্কিন-রুশ আগ্রাসন। এই ত্রি বৃহৎ শক্তি দারিদ্র্য পীড়িত ওই দেশটিতে ভয়ংকর আগ্রাসন চালিয়েছে বার বার, খুন-জখম করেছে লক্ষ লক্ষ অসহায়, নিরপরাধ মুসলমানকে। কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে এ বিষয়ে সবিস্তার কথা বলা গেলো না।

জাত্যাভিমান প্রসঙ্গে একমাত্র হিটলারের বিভৎসতার কথাই আশা করি যথেষ্ট হবে। তথাকথিত জার্মান জাতি বিশ্বের জাতিসমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ- তার মস্তিষ্কপ্রসূত ওই অহম জানান দেবার জন্যে হিটলার দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটান আর তার বলি হন ৫ কোটি আদম সন্তান। জাত্যাভিমানের অপর নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শুদ্র, ম্লেচ্ছ প্রভৃতি শ্রেণিতে তাদেরই স্বজাতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভাগ করে ভারতীয় আর্যরা মানবতাকে চরমভাবে কলুষিত ও অপমানিত করেছে। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় হিন্দু জাত্যাভিমানের সুন্দর প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি কালিদাস রায় :

চারিপাশে তার জমিল লোকের ভিড়।

বলিয়া উঠিল একজন ‘আরে এ যে মেথরের ছেলে,

ইহার জন্য বে-আকুফ তুমি তাজা প্রাণ দিতে গেলে?

খুদার দয়ায় পেয়েছ নিজের জান,

ফেলে দিয়ে ওরে এখন করগে ¯œান।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো এতো বড় মাপের সাহিত্যিকের মুখে যখন আমরা শুনি- ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ কর নি।’ তখন নিজেকে বড় অসহায় বোধ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা বৃটিশ আমলে ইংরেজদের আনুকূল্য পেয়ে শিক্ষা-সাহিত্য-শিল্প-প্রাচূর্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের চেয়ে এগিয়ে যায়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা ‘সংসদ’ অভিধানে বাঙালি ও বাঙাল শব্দের অর্থ করা হয়েছে, অ হধঃরাব ড়ভ ঊধংঃ ইবহমধষ. অহ ঁহৎবভরহবফ ৎঁংঃরপ ড়ভ ঊধংঃ ইবহমধষ. ইড়ৎহ রহ ঊধংঃ ইবহমধষ. অ হধঃরাব ড়ভ ইবহমধষ. অর্থাৎ বাঙালি ও বাঙাল বলতে তৎকালীণ পূর্ববঙ্গের অধিবাসীদেরই বোঝানো হতো এবং তারা ছিলেন ঁহৎবভরহবফ ৎঁংঃরপ. আর জঁংঃরপ শব্দের অর্থ ঙীভড়ৎফ উরপঃরড়হধৎু তে করা হয়েছে, জড়ঁময ধহফ ঁহৎবভরহবফ মানে অভদ্র, অমার্জিত, খসখসে। সংস্কৃতবান নয় এবং অশিক্ষিত এমন লোককে এখনও আমাদের দেশে বাঙাল বলে গালি দেওয়া হয়। আবার এক পেশার মানুষ অন্য পেশার মানুষকে, যে প্রথমোক্ত পেশায় দক্ষ নয়, বাঙাল বলে। অর্থাৎ এখানে বাঙাল বা বাঙালি বলে অপরকে হেয় করাই উদ্দেশ্য। কবিগুরুর সময়ে পূর্ববঙ্গ তথা হালের এই বাংলাদেশের লোকসংখ্যা সাত কোটির কাছাকাছিই ছিল। সব মিলিয়ে এ কথা বোঝা যায়, কবিগুরু বাঙালি বলতে হাল আমলের বাংলাদেশের এই ভূখন্ডের বাসিন্দাদেরই বুঝিয়েছেন, পশ্চিবঙ্গের বাঙালিদের নয় এবং আরো বুঝিয়েছেন যে, এরা অভদ্র রয়ে গেছে, অমানুষ রয়ে গেছে ; সংস্কৃতবান হয়নি (ঁহপঁষঃঁৎবফ), মানুষ হয়নি। অতি সূক্ষভাবে তিনি পূর্ববঙ্গবাসীকে হেয় করেছেন মায়ের ¯েœহাশীষের ছদ্মাবরণে। একথা সবারই জানা যে, বৃটিশ রাজ কর্তৃক কৃত বঙ্গভঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা প্রত্যাখ্যান করেছিলো এবং কবিগুরুও তাদের সমর্থনে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি রচনা করেছিলেন। এখানেও উচ্চ-নীচ বোধের অহম। স্মর্তব্য, তিনি পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী ছিলেন।

মহাপ্রভু আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম।’ তিনি আরো বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র কাছে সে-ই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে আল্লাহ্কে বেশি ভয় করে।’ ‘ইন্না আক্রামাকুম ইন্দল্লাহি আত্ক্বা-কুম।’ ইসলামের নবী, মানবতার মহান বন্ধু মুহাম্মদ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন, মানব জাতি অস্তিত্বশীল হয়েছে আদম ও হাওয়া থেকে। একজন অনারবের উপর আরবের বিশেষ মর্যাদা নাই যেরূপ নাই একজন আরবের উপর অনারবের ; একইভাবে একজন কালোর উপর সাদার যেমন বিশেষ মর্যাদা নাই তদ্রুপ সাদার উপর কালোরও কোনরূপ বিশেষত্ব নাই। তাক্ওয়া বা আল্লাহভীতি আর সৎকর্মশীলতাই শুধু ব্যতিক্রম।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত-জালিয়াত, খেলছে জুয়া।’ সভ্যতার দাবীদার তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার সুসভ্য (?) মানুষগুলো জাতের নামে বজ্জাতি করেছে এবং আজ অবধি করে চলেছে। এরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে তাবৎ দুনিয়ার সাধারণ, নিরপরাধ, সহজ-সরল মানুষগুলোকে গোলামীর কঠিন জিঞ্জিরে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। বিশ্বের কোটি কোটি শত কোটি মানুষকে এহেন কায়দায় শাসন-শোষণ করে তারা তাদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করছে।

সেল- ০১৮৬৯ ৮৬৬৯০০