এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:

চকরিয়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে বরইতলী-পেকুয়া-মগনামা মহাসড়ক লাগোয়া অবস্থিত উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বড়বিল।এ বিলের দক্ষিণের পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন হচ্ছে বরইতলী।বরইতলী ইউনিয়নের মছনিয়াকাটা ও হারবাং ইউনিয়নের ডবলতলী গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বড়বিল।এ বিলের আয়তন ও পরিমাণ সম্পর্কে স্থানীয়দের কোন ব্যক্তির কাছে জানা নেই। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমি নিয়ে এ বড়বিল বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে।পুরো বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও হারবাং ছড়ার পানিতে বড়বিলটি পরিপূর্ণ ডুবে থাকে। বছরের অধিকাংশ সময় এ বিল জলবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকায় পুরো বিল জুড়ে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মে সমারোহ হয়ে উঠে।বিলের ভেতরে যত এগুতে থাকবে ততোই দেখা মিলবে সাদা শাপলা ফুলের সমারোহ। সাদা ফুল শাপলা সবজি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।এ শাপলা বিক্রি করে প্রায় ৫০টি পরিবার দীর্ঘ ১০বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হারবাং ইউনিয়নের পুরো এ বড় বিলের ৮০ শতাংশ জমি অথৈ পানিতে তলিয়ে আছে। দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা বিলে মাছ ধরছে। আগাছা পরিস্কার করে অনেকেই নৌকা নিয়ে বিলের গহিনে যাচ্ছে।বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছে নৌকায়। কেউ এ বড়বিল থেকে শাপলা তুলে অনেকেই বাজারে বিক্রি করার জন্য মহাসড়কের পাশে স্তুপ করে রেখেছে।ঠিক কত বছর ধরে বিলে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন,তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে শাপলা ফুল ফুটতে দেখছেন তারা।বড়বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজার ও চট্রগ্রাম বিভাগীয় বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে বিলের পাশ্ববর্তী এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বিল সংলগ্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আসছেন এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবার। বিলে আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত শাপলা ফুল পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে,উপজেলার বড়বিলের জমির মালিকদের দুঃখ কোনো অবস্থাতে লাঘব হচ্ছে না।প্রায় এক হাজার ২০০ হেক্টরের বিলের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে বহু বছর ধরে।তিন বছর আগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অর্থায়নে দুটি খাল খনন করেও জলাবদ্ধতা নিরসন করা যায়নি।হারবাং ইউনিয়নের দুঃখ হিসেবে খ্যাত বড়বিল জলাবদ্ধতার কারণে আমন ও বোরো মৌসুমে চাষের আওতায় আনা যাচ্ছে না।অথচ এ বিশাল বিলটি জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা করা গেলে প্রতিবছর আট হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা যেত।তারা আরো জানান,ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি একটু কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়।ফলে আমন ও বোরো চাষ করা সম্ভব হয় না। বোরো মৌসুমে সামান্য চাষাবাদ হলেও আগাম বৃষ্টিতে বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে থাকে।

হারবাংয়ের এ বড়বিল থেকে প্রতিদিন শাপলা ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের ডবলতলী এলাকার শাহাব উদ্দিন ও শাহ আলমের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা বলেন,সারাদিন কৈ ফোটা রোদ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি,যাই হোক না কেন তাদের বিলে যেতে হয়।দু’জনকে শাপলা তুলেই বাজারে বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হয়।তা না হলে তাদের সংসার চলে না বলে জানায়।তারা আরো বলেন,দীর্ঘ ১০বছর ধরে বিল থেকে নিয়মিত শাপলা তুলে বাজারে ও চট্রগ্রাম বিভাগীয় শহরে গাড়ীযোগে গিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে সবজি হিসেবে শাপলা বিক্রি করে আসছে।সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩০০-৪০০তোড়া(গাদা) শাপলা তোলা হয়। প্রতি তোড়াতে ৪০টি শাপলা থাকে।এক তোড়া(গাদা) ২০টাকা করে বিক্রি করা হয়।এই শাপলা বিক্রি করে দৈনিক ৫০০-৭০০টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাপলা আসলে কোন কৃষি পণ্যের আওতাভুক্ত পড়ে না।এটি প্রাকৃতিক ভাবে কৃষি জমি,পুকুর কিংবা ডোবাতে জন্মে নেয়।তবে এ বিষয়ে আমাদের কোন পরামর্শ দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না আমরা চেষ্টা করি কৃষকদের সব সময় সহায়তা করার।সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে-তৎমধ্যে সাদা,লাল ও বেগুনি রঙয়ের।সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি।সাধারণত শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বলে তিনি জানান।