ডেস্ক নিউজ:

রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা বন্ধে এক বিবৃতিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। তবে এই প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। দেশটির একজন প্রতিনিধি দাবি করে, এই প্রস্তাবে তাদের সমস্যার সমাধান হবে না বরং তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির সন্ত্রাসী হামলার কারণেই সমস্যার শুরু হয়। বিদেশি সেনারাও বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সংকট মোকাবেলায় মানবিক পরিস্থিতির তৈরি হয়। সেটা সমাধানে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে গিয়েছে। দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার হয়তো প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে অনেক কিছু এড়িয়ে গেছে। কিন্তু রাখাইনের সমস্যা সমাধানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।

সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারকে সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তারা।

বিবৃতিতে রাখাইনে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যেন তারা মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে পারে। এছাড়া আনান কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। নভেম্বরের জন্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিনো কার্ডি এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য এনজিওকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেন।

তারা জানায়, মিয়ানমার ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন রোহিঙ্গাদের পাশে থাকে। ২৪ অক্টোবর রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘ মিয়ামনমারকে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানায়।

দুই দেশের যৌথ কমিশন গঠনের প্রয়াসকেও স্বাগত জানায় নিরাপত্তা পরিষদ। তারা ‍দুই দেশকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে যুক্ত করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশও এই প্রশংসার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারি এক মুখপাত্র জানান, এই বিবৃতি খু্বই সময়োপযোগী এবং এর মাধ্যমে সংকট সমাধান সহজ হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা অস্বীকার করায় মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করার প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে উঠেছে। রাখাইনের সন্ত্রাস ‘কাল্পনিক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আশা করেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের সহায়তা করবেন এবং বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দেবেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জাতিসংঘে ব্রিটিশ উপ-রাষ্ট্রদূত জোনাথন অ্যালেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ও মিয়ানমারের সমঝোতাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি তারা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিবে। এবং নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে তাদের থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।’

নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক অক্ষয় কুমার বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ দেখিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সবাই একমত। তবে চীনের বিরোধীতা থাকলেও তারা প্রস্তাব পাশ হবে কিনা সেটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। কারণ বিষয়গুলো চীনের জন্য অস্বস্তিকর।’