নিজস্ব প্রতিবেদক , সিবিএন :

জাতীয় সংসদের ২৯৪ এবং কক্সবাজার-১ আসনটি চকরিয়া-পেকুয়া দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত। ২০১৪সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রতিদ্ধন্ধী না থাকায় বিনাভোটে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মোহাম্মদ ইলিয়াস সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০০৮সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হাসিনা আহমেদ আ’লীগের প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি’কে ৩৫হাজার ৪শত ১ ভোটের ব্যবধানে ১,৫৬,৫১২ভোট পেয়ে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যে ২০১৮/২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা যে যার যার মত করে কেন্দ্রে তদবীর চালাচ্ছে। সেইসাথে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এলাকায়।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদ্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বরণ করতে শোডাউনও করেছে আ’লীগ ও বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা। এভাবে আ’লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও এ সংসদীয় আসনে বিএনপি’র একক প্রার্থী নির্বাচনে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে থাকলেও অস্বস্তিতে রয়েছেন আ’লীগ নেতাকর্মীরা। চকরিয়া-পেকুয়ায় গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। কমিটির কার্যক্রম চলছে বিভক্তি হয়ে। এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে- এমন অভিমত স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

অন্যদিকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের সিদ্ধান্তে একক প্রার্থী হবে এই আসনে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে সালাউদ্দিন আহমেদ অথবা হাসিনা আহমেদ এই আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চকরিয়া-পেকুয়ার বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্বে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া আর পেকুয়া পৃথক উপজেলা হলেও সংসদীয় আসনে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দু’টি উপজেলায় রয়েছে সংগঠনের সভাপতি সম্পাদকসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। চকরিয়া উপজেলায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে চলছে আ’লীগের কার্যক্রম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম ও ফাঁশিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এর নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগের কার্যক্রম চললেও অপর একটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চকরিয়ার বাসিন্দা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আ’লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, শিল্প ও বানিজ্যে বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মিথুন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য কমর উদ্দিন, বরইতলির সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আ’লীগ সদস্য জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, যুগ্ন-সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল ও সুরাজপুর মানিক পুরের চেয়ারম্যান আজিমুল হকসহ আরো কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সমর্থনপুষ্ঠ হয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম।

একইভাবে পেকুয়া উপজেলায় জাফর আলমের অনুসারী হিসাবে পরিচিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী বিটু ও সাধারণ আবুল কাশেম উপজেলা আ’লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপরদিকে দু’জনের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে মর্মে আ’লীগের কার্যক্রম চালাচ্ছে পেকুয়ার বাসিন্দা জেলা আ’লীগ সদস্য এস.এম গিয়াস উদ্দিন, সদস্য উম্মে কুলসুম মিনু, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, যুগ্ন সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

আ’লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উপজেলা ভিত্তিক দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়ে থাকে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে পৃথকভাবে। সদ্য কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বরণ করতে গিয়ে চকরিয়ায় পৃথকভাবে কর্মসূচি দেয় দু’টি গ্রুপ। জাফর আলমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল ও রেজাউল করিমের নেতৃত্বে হারবাংয়ের ইনানী রিসোর্টে আয়োজিত সভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দু’টি সভায় লোক সমাগম দেখে স্থানীয় এলাকাবাসীরাও হতবাক হয়ে পড়েন। কিন্তু পৃথক এ কর্মসূচি কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে। প্রার্থী যেই হউক গ্রুপিং থাকলে আবারো নৌকার পরাজয় নিশ্চিত বলে নেতাকর্মীদের অভিমত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুযোগটি নিতে পারে জাতীয় পার্টি। গ্রুপিংকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এ আসনটি চাইতে পারে। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই সুযোগটি নিয়েছিল জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি মোঃ ইলিয়াস। জাফর আলমকে কেন্দ্রীয় আ’লীগ প্রার্থী ঘোষনা করলেও দলীয় গ্রুপিংয়ে তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টিকে এ আসটি ছেড়ে দিয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

পেকুয়ার স্থানীয় কয়েকজন আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী জানিয়েছেন, পেকুয়া বিএনপি’র একজন কেন্দ্রীয় নেতার বাড়ি। তারপরও আ’লীগের অনুসারী কম নয়। দলীয় বিশৃংখলা ও গ্রুপিংয়ের কারণে বার বার পিছিয়ে পড়ছে আ’লীগ। কেন্দ্র ও জেলা আ’লীগের নেতৃত্বে পেকুয়ার সব নেতাকে এককাতারে নিয়ে আসতে পারলে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র সাথে সমান পাল্লা দিবে আ’লীগ। যারাই এ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার তদবিরে আছেন তাদেরকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলার কথা বলেছেন নেতাকর্মীরা। ঠিক একইভাবে চকরিয়ায়ও কোন্দল মিটিয়ে নিলে আ’লীগের বিজয় সুনিশ্চিত বলে ধারণা। তারা জানিয়েছেন, গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আ’লীগ হেরেছিল মাত্র ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। গ্রুপিং ভেঙ্গে ঐক্যতার ভিত্তিতে কাজ করলে এ আসনটি আ’লীগের দখলে আসবে বলেও জানান তারা।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া-পেকুয়ায় তাদের কোন ধরণের গ্রুপিং নেই। চকরিয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন আর পেকুয়ায় চলছে সদর চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ্র একক নেতৃত্বে। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের কমিটি গোছাতে ব্যস্ত তারা। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে ভারতে মামলায় বিচারাধীন) এই আসনটি প্রার্থী নির্ধারণ করে থাকেন। মামলা জটিলতায় তিনি প্রার্থী হতে না পারলেও তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী নিশ্চিত। গত সপ্তাহখানেক আগে খালেদা জিয়ার কক্সবাজারের সফরে এমন মত প্রকাশ করেছেন বলেও দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। যার কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি।

পেকুয়া উপজেলা বিএনপি’র দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় দলে কোন গ্রুপিং নাই। সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে সালাউদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি না পারলে হাসিনা আহমেদ এ আসনের প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন নেত্রী খালেদা জিয়া।