সিবিএন:

ত্রাণ ও সরকারি সহায়তা পেতে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে ক্রমে যুক্ত হচ্ছে। তবে রায়োমেট্রিকে একবার যুক্ত হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গড়া সম্ভব হবে না এমনটি জানার পর নিবন্ধন থেকে নিজেদের দূরে রাখছে পুরনো রোহিঙ্গারা।

শনিবার পর্যন্ত ৪ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গা বিন্ধনের আওতায় এসেছে। তাদের সবাই চলতি সংকটের পরই (২৫ আগস্টের পর) বাংলাদেশে ঢুকেছে। এখানে পুরনো কেউ অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা হিসেবে বায়োমেট্রিকে নিবন্ধন হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নষ্ট হবে। এছাড়া কোনো অপরাধ কর্ম করলেও ধরা পড়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। তাই অনৈতিক সুবিধার নেয়ার আশায় পূর্বে আসা রোহিঙ্গারা নিবন্ধনের বাইরে থাকার কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ গত দু’দশকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে প্রবাসী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চলমান বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪ লাখ ৬৫৮ জন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। নিবন্ধনকৃত প্রায় রোহিঙ্গাই চলতি সংকটে এসেছে। এ নিবন্ধন কার্যক্রমে হাতের দশ আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের পাশাপাশি সংগ্রহ করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের যাবতীয় তথ্যাবলী।

আর এ আঙুলের ছাপ ডাটাব্যাজ অনলাইনে সংযুক্ত করা হচ্ছে এবং দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নেটওয়ার্কে। ফলে নিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গাদের কেউ আর বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবে না।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আরেফিন আহমেদ বলেন, ডাটাবেজে আমরা রোহিঙ্গাদের ১০ আঙুলের ছাপ স্টোর করছি, যাতে পরবর্তীদের রোহিঙ্গাদের আমরা শনাক্ত করতে পারি।

তথ্যমতে, বিশেষ করে ত্রাণ সুবিধা পাবার আশায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা প্রতিদিন সকাল থেকে লাইন ধরে নিজেদের নিবন্ধনে যুক্ত করছে। কিন্তু এ নিবন্ধনভুক্ত হলে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে না পারার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিবন্ধনে আগ্রহী হচ্ছে না পুরাতন রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, রোহিঙ্গাদের চেহারা, ধর্মীয় অনুভূতি সব কিছু এ অঞ্চলের আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গেমিলে যায়। ফলে বিশেষ নজর না দিলে তাদের সনাক্ত করা বড়ই কঠিন হয়ে পড়ে।

আগামীতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে নতুন-পুরনো সব রোহিঙ্গাকেই নিবন্ধনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয় শরণার্থীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। বর্তমানে নতুন আসা ৭ লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গার পাশাপাশি টেকনাফ ও উখিয়ায় রয়েছে আরও ৫ লাখ পুরনো রোহিঙ্গা।

ইউএনএইচসিআরর সমন্বয়কারী ভ্যানু নোভপিচ বলেছেন, নতুন পুরনো সব রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ দেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় পুরনো রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এমনটি জানিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচলাক মো. আবু নাঈম মাসুম।

এদিকে, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি কেন্দ্রে প্রথমত ৩শ’ জনকে নিবন্ধনের মাধ্যমে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। একে গতিশীল করতে বাড়ানো হয়েছে আরও ছয়টি কেন্দ্র। উখিয়ায় ৫টি এবং টেকনাফে ২টি কেন্দ্রের ৭০টি বুথে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।