ডেস্ক নিউজ:
রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া বন্ধ হলেও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধ হচ্ছে না। খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কড়াকড়ির কারণে রোহিঙ্গারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারলেও উখিয়ার আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা সাঁতরে নাফনদী পার হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৯ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোহিঙ্গা প্লাস্টিক কন্টেইনারের সহায়তায় সাঁতরে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছেন।

রোহিঙ্গারা বলছে, যারা এখনো বেঁচে আছেন তাদের একপ্রকার ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে মিয়ানমারের সেনারা। বাজারে কোনো দোকানপাট খুলে বসা কিংবা অন্য কোথাও থেকে খাবার যোগাড় করতে দিচ্ছে না। ক্ষুধার তাড়নায় বাপ-দাদার ভিটেমাটিকে আর আঁকড়ে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশে আসার জন্য হাঁটা শুরু করেছে মিয়ানমারের বুচিদং ও রাচিদং এলাকার রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ ইকবাল আহমেদ জানান, শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্পে যাদের নেয়া হয়েছে তদের কাছ থেকে পালিয়ে আসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তারা খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী অবরোধ করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

পুরনো রোহিঙ্গারা নিবন্ধনে আগ্রহী নয়
ত্রাণ ও সরকারি সহায়তা পেতে নতুন আসা রোহিঙ্গারা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে যুক্ত হচ্ছিল। কিন্তু একবার যুক্ত হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া সম্ভব হবে না এমনটি জানার পর নিবন্ধন থেকে নিজেদের দূরে রাখছে পুরোনো রোহিঙ্গারা। শনিবার পর্যন্ত ৪ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। এ নিবন্ধন কার্যক্রমে হাতের দশ আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের পাশাপাশি সংগ্রহ করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের যাবতীয় তথ্যাবলী।

আর এ তথ্য সংযুক্ত হচ্ছে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নেটওয়ার্কে। ফলে নিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গাদের কেউ আর বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবে না।

গত দু’দশকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে প্রবাসী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার স্কোয়াড্রন লিডার মোঃ আরেফিন আহমেদ বলেন, ডাটাবেজে আমরা রোহিঙ্গাদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছি, যাতে পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের আমরা শনাক্ত করতে পারি।

এ দিকে ইউনিসেফ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ অপুষ্টি বিপজ্জনক গতিতে বেড়েছে। শুক্রবার সংস্থাটি জানায়, প্রাথমিক তথ্য বলছে গাদাগাদি করে থাকা শরণার্থী শিবিরের একটিতে ৭.৫ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউনিসেফের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ বুলেরিক জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, যেসব শিশু আসছে তাদের অবস্থা ভীতিজনক। দুই হাজারের বেশি চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ইতোমধ্যে ১৫টি কেন্দ্রে ইউনিসেফ ও তার অংশীদারদের দেওয়া চিকিত্সা নিয়েছে।