ডেস্ক নিউজ:

আওয়ামী লীগএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বটে তবে বিশেষভাবে চোখ রাখছে ২০০টি আসনের দিকে। সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত গত দুটি (২০০১ ও ২০০৮) সাধারণ নির্বাচনের হারজিতকে মাথায় রেখেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগুচ্ছে দলটি। সরাসরি জয় ও স্বল্প ব্যবধানে হেরে যাওয়া এসব আসন এখন দলটির নির্বাচন ভাবনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এই ২০০ আসনের মধ্যে অন্তত ১৬০ থেকে ১৭০টিতে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চায় শাসকদলটি। অবশিষ্ট ১০০টি আসনেও প্রার্থিতা থাকবে দলটির তবে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে আসন ভাগাভাগির অঙ্ক কষা হবে এসব আসনেই। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা এমন আভাস দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়,দেশের ৮টি বিভাগে ২০০ আসন বাছাই করার কাজ করছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের ৭০ আসনের ৬০টি,রংপুরের ৩৩টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি, খুলনা বিভাগের ৩৬ আসনের মধ্যে অন্তত ২৫টি, বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে ১৫টি ও সিলেট বিভাগের ১৯টির মধ্যে অন্তত ১৫টি আসন আছে দলটির বাছাই তালিকায়। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের ৩৯টির মধ্যে ২৫টি, ময়মনসিংহের ২৪টির ২০টি আসনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের দলগত সাফল্যের হিসাবটা জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বরাবরই একটু দুর্বল। তারপরও এই বিভাগের ৫৮টি আসনের মধ্যে ১০টিকে নিশ্চিত করা ও বাকিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা আছে দলটির নীতি নির্ধারণী বৈঠকে। এরই অংশ হিসেবে ৮ বিভাগের আসনগুলো নিয়ে নীতি নির্ধারণী ফোরামে চলছে দফায় দফায় পর্যালোচনা। নীতি নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, ৮ বিভাগের চিহ্নিত আসনগুলোয় দলের রাজনৈতিক ও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।

সরকারের একাধিক নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো মনে করে, এ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করতে পারায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এবার নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আসনও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৩০০ আসনেই থাকবে। তবে কোথাও কোথাও জোটের প্রার্থীকে ছাড় দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দলেরই ৩০০ আসনে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করা ঠিক নয়, আমরাও এর বাইরে নই।’

দলটির নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, ‘২০০১ ও ২০০৮ সালে সীমিত ভোটে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে, এবার সেসব আসনে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে দলটি। ওই আসনগুলোয় এবার বিজয় ছিনিয়ে আনার সব রকম কৌশল অনুসরণ করবে তারা। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, ‘আমরা ভোটযুদ্ধে নামবো ২০০ আসনে। এটা আমাদের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত।’

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর চার জন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আমাদের এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই নেতারা বলেন, ২০০ আসনে লড়াই করেই পরবর্তী সরকার গঠন করার জন্য ১৬০ থেকে ১৭০ আসনে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। তারা আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী যে ব্যাপক আসনে বিজয়ী হয়েছে, এবার তেমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার আশা নেই। তাদের মতে, ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকও ছিল না। ফলে ওই নির্বাচনের ফলও আশাও করা যায় না। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করার মতো আসনে বিজয়ী হতে পারবে, এমন আত্মবিশ্বাস আছে দলটির ভেতরে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দলই ৩০০ আসনে জিতবে, এমনটা মনে করে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার মতো আসনগুলোকে চিহ্নিত করছে। সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

ফারুক খান বলেন, ‘২০০১ ও ২০০৮ সালে বেশ কিছু আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমিত-সংখ্যক ভোটে পরাজিত হয়েছে। সে আসনগুলো এবার চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই আসনগুলোতে দলীয় অবস্থান আরও সুসংহত করা হবে।’