সৈয়দ মোহাম্মদ শাকিল :

২য় পর্ব

নিজ দেশ মিয়ানমারে সেনা ও রাখাইনদের পাশবিকতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেন। এভাবে নতুন করে ১২ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফ, কক্সবাজারসহ সাড়া দেশে আশ্রয় পেয়েছে। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন বিপদে পড়ছে বাংলাদেশ। এ যেন খাল কেটে কুমির আনা।
নতুন-পুরোনো মিলে রোহিঙ্গার উপস্থিতি সংখ্যালঘু করে দিয়েছে কক্সবাজারের এই দুই উপজেলার জনগণকে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের হিংস্রতার রূপ দিন দিন মেলে ধরছে। খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও। গত ১ মাসে অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়েছে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা। তাদের অপকর্মে স্থানীয়রা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের নজর রাখতে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
যোগাযোগের জন্য রোহিঙ্গারা অবাধে বাংলাদেশি নানা টেলিকম কোম্পানির সিম ব্যাবহার করতে পারায় অনায়াসে অপরাধ ঘটিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু বনে গেছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় মানুষ গুলো। আবার রোহিঙ্গাদের হিংস্রতার শিকারও হচ্ছে স্থানীয়রা। আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য-বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা জোরদারে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। অব্যাহত ত্রাণ বিতরণে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে ত্রাণের পাহাড় হয়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পাওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। এরই মাঝে চুরি ও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এমন হতে থাকলে রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফবাসীর ভবিষ্যতে কী অবস্থা হতে পারে এটি সহজে অনুমেয় বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা চরম বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, হানাহানি, নিজেদের মধ্যে মারামারি, পুলিশ ও স্থানীয়দের ওপর হামলা এগুলো প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া ইয়াবা পাচার, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের অনেকেই। এসব কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর হাতেও এখন দেশি-বিদেশি অস্ত্র। ফলে ক্যাম্পের ভেতর বাহিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি উখিয়ার বালুখালীতে অভিযান চালিয়ে এমনই একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের আটক করে র্যা ব। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মানবিক সহায়তা-সহানুভূতি পেলেও কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে। হত্যা, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৮ অক্টোবর শনিবার রামুতে রোহিঙ্গা যুবকের দায়ের কোপে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু, এর আগের দিন রাতে উখিয়ায় নলকূপ স্থাপনকর্মী পাঁচ বাংলাদেশিকে মারধর এবং ক্যাম্পে ডাকাতিকালে সশস্ত্র রোহিঙ্গা আটকের ঘটনায় তারা শঙ্কিত।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, আশ্রয়ের দুই মাসের মাথায় তারা এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়েছে। তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে।
২৮ অক্টোবর সকালে কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং হেডম্যানপাড়ায় আবদুল জব্বার নামে স্থানীয় এক যুবককে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা যুবক হাফেজ জিয়াবুল মোস্তফা। পুলিশ এ ঘটনায় মোস্তফা এবং তার ফুফু ভেলুয়ারা বেগমকে আটক করেছে। নিহত জব্বার রামুর খুনিয়াপালংয়ের কালুয়ারখালীর হেডম্যান বশির আহম্মদের ছেলে।
এর আগে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাতে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় ৫ বাংলাদেশি গুরুতর আহত হন। একই রাতে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৫ জনকে রোহিঙ্গারাই আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। পরে শনিবার অভিযান চালিয়ে আরও ৫ জনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়।
টেকনাফের হৃীলা রঙ্গিখালী একটি বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে ৬টি মোবাইল নিয়ে পালানোর সময় রোহিঙ্গা যুবক জাবেদকে পরিবারের লোকজন হাতে নাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
১৯ অক্টোবর রাত ১০টারদিকে লেদা টাওয়ার সংলগ্ন মৌলভী পাড়ায় ইউছুপ আলীর বাড়ির সামনে আবু ছিদ্দিককে চুরিকাঘাত করার ঘটনা ঘটে। সে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদার মৃত কালা চাঁনের পুত্র। ২১অক্টোবর ভোর পৌনে ৬টারদিকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন আহত আবু ছিদ্দিক। ১৮ অক্টোবর বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু সীমান্ত থেকে নূর আহাম্মদ (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প লাগোয় খাল থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ অক্টোবর কুতুপালংয়ে ত্রাণের টোকেন বিতরণ করতে গিয়ে মুক্তি নামের এনজিওকর্মী রোহিঙ্গাদের হাত থেকে বাঁচতে গাছে উঠে পড়েন। ১৬ সেপ্টেম্বর কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের হামলায় রোহিঙ্গা খুন হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের হামলায় উখিয়ার পালংখালী এলাকার মুরগির খামারি জমির উদ্দিন আহত হন।
এটি খুবই স্বাভাবিক যে, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার ফলে সেখানের পাহাড় ও বনভূমি উজাড় হবে।
তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তুলতে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি একর জমির সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় এই বনায়ন করেছিল বন বিভাগ। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব না হলে এবং ফের বনায়ন করা না গেলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে পাহাড় ধসের ঝুঁকিও রয়েছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে বন বিভাগের আরো অনেক জমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।
কোনো এলাকায় এভাবে বনভূমি ধ্বংস হলে তার সরাসরি প্রভাব যেমন ওই এলাকার পরিবেশের ওপর পড়ে, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে সেখানের ইকোসিস্টেম বদলে যায়। সেখানের প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিকতা দেখাতে গিয়ে কক্সবাজারের প্রাণ-প্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের জানমালের যে ক্ষতি এরই মধ্যে হয়েছে, সেটি সরকার বা আন্তর্জাতিক বিশ্ব কীভাবে পোষাবে?
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে এখন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় অধিবাসীরাই সংখ্যালঘু। তাদের কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। দোকানপাটে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রথমে তাদের যে সহমর্মিতা ছিল, তা এখন ক্রমেই রোষে পরিণত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের তারা এখন নিজেদের জীবন-জীবিকার জন্য হুমকি মনে করছে। এভাবে চলতে থাকলে ছোটখাটো মারামারি, খুনোখুনি বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নেবে। লাখ লাখ মানুষের মধ্যে এই সহিংসতার উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়লে তা কত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। সুতরাং সে রকম পরিস্থিতি তৈরির আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই। এমনকি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে আশ্রয় দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তাও খুব দ্রুত সম্ভব নয়। লাখ লাখ মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এই কাজে যত বিলম্ব হতে থাকবে, স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ ততই বাড়তে থাকবে। মানবিকতার খাতিরে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় মানুষের বিরক্তি ক্রমশ বিতৃষ্ণায় রূপ নেবে।
র্যা ব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন জানিয়েছেন, বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন বাগান এলাকায় ৬/৭ জনের রোহিঙ্গা ডাকাত দল ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে গত রোববার মধ্যরাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ ৫ রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়। আটকরা হলো আবু বকর সিদ্দিক (২০), পিতা-ওসমান গনী, সাং-সিতাপুর,থানা-মংডু, জেলা-আকিয়াব, মিয়ানমার; মো. আনোয়ার (২০) পিতা-মৃত আ. আলী, সাং-টমবাজার, থানা-মংডু, জেলা-আকিয়াব, মিয়ানমার; মো. ফারুক (২২), পিতা-হোসেন আহম্মেদ, সাং-ফকিরাবাজার, থানা-মংডু, জেলা-আকিয়াব, মিয়ানমার; ইমরান (২২), পিতা-মৃত হাসান শরিফ, সাং-চালিপ্রাং, তানা-মংডু, জেলা-আকিয়াব, মিয়ানমার এবং খায়ের মোহাম্মদ (২০), পিতা-হাবিব আহাম্মদ, সাং-রাবিল্লা, থানা-মংডু, জেলা-আকিয়াব, মিয়ানমার। তাদের কাছ থেকে দেশীয় ৫টি রামদা উদ্ধার করা হয়। এ সময় কয়েকজন ডাকাত পালিয়ে যায়।
রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, সরকার এবং দলীয় সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিলেও স্থানীয়দের অমানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। রোহিঙ্গাদের হাত ধরে দেশে প্রতিনিয়ত মরণ নেশা ইয়াবা আসছে। এদিকে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চুরি, ডাকাতি, খুন সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। ফলে রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জীবন। রোঙ্গিহারা বিষফোঁড়ায় পরিণত হচ্ছে দিন দিন। তাই অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না হলে নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে বলে তিনি জানান।
পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী জানান, মাত্রাতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের ভারে উখিয়া-টেকনাফ নুয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাদের অপরাধ কর্মে বিষিয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জীবন। অদূর ভবিষ্যতে রোঙ্গিহারা চরম সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সীমান্তের সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাদের শক্ত হাতে দমন করা না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। তাই রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া চলাচলে কঠোর নজরদারি রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বিসর্জন দিচ্ছে স্থানীয়রা। এরপরও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের শিকার হওয়া বড়ই নির্মম। রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ অত্যন্ত কঠোর নজরদারি রেখেছে।
প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় বাংলাদেশিদের নানাবিধ সংঘাত-সংঘর্ষের খবর সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। শুধু মানুষের জানমালই নয়, রোহিঙ্গাদের কারণে এরই মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে উজাড় হয়েছে বনভূমি, ধ্বংস হয়েছে বন্যহাতির আবাস ও বিচরণস্থল। লাখ লাখ মানুষের পয়ঃবর্জ্য বিষিয়ে তুলছে ওই এলাকার পরিবেশ। ফলে মিয়ানমারের রাখাইনে একটি ভয়াবহ সংকটের হাত থেকে কোনোমতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে এই সংকট এখন এক নতুন রূপ পেয়েছে, যার সরাসরি ভিকটিম তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখের অধিক নতুন রোহিঙ্গা। পুরাতনসহ এখন উখিয়া-টেকনাফে ১২ থেকে ১৫ লাখ। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এবার তাদের হিংস্ররতার শিকারও হচ্ছে স্থানীয়রা।