ইমাম খাইর, সিবিএন
উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ হাতে ত্রাণ দিতে কক্সবাজার সার্কিট হাউজ থেকে উখিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
সোমবার সকাল ১১ টা বেজে ২০ মিনিটের দিকে হিলটপ সার্কিট হাউজ থেকে বের হন তিনি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)কে জানান, নেত্রীর সঙ্গে ২০টির মতো গাড়ী রয়েছে। এর আগে বিএনপির ৪৫ ট্রাক ত্রাণ সেনা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। উখিয়া কলেজে নির্মিত সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে ১‘শ সাড়ে সাত টন ত্রাণ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিরি সদস্য মির্জা আব্বাস। বাকী আড়াই টন ত্রাণ উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খালেদা জিয়া বিতরণ করবেন।
তিনি জানান, উখিয়ায় বালুখালি পানবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বালুখালি-২, হাকিমপাড়া ও শফি উল্লাহকাটা ঢালা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে ত্রাণ দিবে বিএনপি। শফি উল্লাহকাটা ঢালা ক্যাম্পে প্রথমে ত্রাণ বিতরণের কথা রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার সিবিএনকে জানান, উখিয়ায় ত্রাণ বিতরণ শেষে বালুখালি পান বাজারে অবস্থিত ড্যাবের মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন খালেদা জিয়া।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন মেডিকেল ক্যাম্পে সন্তানসম্ভবা পাঁচ হাজার নারীকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী, পাঁচ হাজার শিশুকে শিশুখাদ্য বিতরণ করবেন। গত ১২ আগষ্ট থেকে ড্যাবের ওই ক্যাম্পে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।
ড্যাব মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ক্যাম্পে দক্ষ মেডিকেল টীম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।
উখিয়ার ত্রাণ কার্যক্রম তদারক করছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী। ত্রাণ বিতরণ শেষে বেগম জিয়া চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে হবেন।
রবিবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে পৌঁছেন খালেদা জিয়া। এসময় বিশাল একটি মিছিলও তার গাড়িবহরের সঙ্গে কক্সবাজার সার্কিট হাউজ পর্যন্ত আসে।
দুপুর সোয়া বারোটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজ ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে শনিবার ঢাকা ছাড়েন তিনি।দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বেগম জিয়ার আগমণকে ঘিরে পুরো শহরে উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। নেত্রীকে কাছ পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রবিবার বিকালে খালেদা জিয়ার গাড়ী বহর কক্সবাজার জেলায় প্রবেশ করার পর সড়ক সংলগ্ন সবগুলো বাজারেই ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। কোথাও কোথাও মাদ্রাসার ছাত্ররাও দাঁড়িয়েছিল শুভেচ্ছা জানাতে। বিএনপির চেয়ারপারসন পথিমধ্যে গাড়ি থেকে ভক্ত-অনুসারীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। খালেদা জিয়ার আগমনে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ব্যাপক সাড়া পড়ে। নেত্রীর আগমণ সাধারণ মানুষর কাছে পৌঁছাতে এলাকাভিক্তি মাইকিংও করা হয়।
পাঁচ বছর পর কক্সবাজারে বিএনপি প্রধানের এ সফরকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনে কক্সবাজার আসেন বেগম জিয়া। সুদীর্ঘ ৫বছর পর তার আগমনে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দেখা দিয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে গতকাল দুপুর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শহরের কলাতলী ডলপিন মোড় থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী অপেক্ষা করতে থাকে। মিছিলে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে শহরের অলিগলি। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক উপ-সড়কে টাঙানো হয় হরেক রকম ব্যানার ফেস্টুন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইফ শাহজাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন সাবেক এমপি হাসিনা অহমদ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, যুগ্ম-সম্পাদক এডভোকেট আবু ছিদ্দিক ওসমানী, দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, মহিলাদলের সভানেত্রী নাসিমা আকতার বকুল, সাধারণ সম্পাদক কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর হুমায়রা বেগম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য এম মোকতার আহমদ, জেলা যুবদলের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির আলী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মনির উদ্দিন মনির, পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি এস্তাক আহমদ, পৌর যুবদলের সভাপতি আজিজুল হক সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মাস্টার জসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদুসহ আরও অনেক নেতা রয়েছেন।
সব কিছু সমন্বয় করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইফ শাহজাহান চৌধুরী।