মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ৮ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্দেশে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনে অভিযোগ সত্যতা পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তপন কুমার ধর’কে অপসারণের দাবি জানান অভিভাবকসহ সচেতন মহল।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় গত পহেলা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩০জুন ২০১৭ ইংরেজী পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট ৮,৩৩,৬৯৩ টাকা সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে আত্মসাৎ করেছে বলে মৌখিক ও সালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তৎমধ্যে ২০১৫ সালে ছাত্র-ছাত্রীর বেতন বাবদ ১,৯৫,০০০ টাকা আন্তঃ অডিট থেকে গোপন করেছে। স্কাউট চাঁদা বাবদ মোট আয় ৫১ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার সাতশত সাত টাকা ব্যয় দেখিয়ে অবশিষ্ট ৪৪,২৯৩ টাকা ব্যাংকে জমা না করে গোপন করা হয়েছে। প্রশংসা পত্র বাবদ ৩০ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেখিয়ে অবশিষ্টি টাকা গোপণ করা হয়েছে যা আত্মসাতের সামিল। ২০১৬ সালের ছাত্র-ছাত্রীর বেতন বাবদ ১,৭৭,০০০ টাকা আন্তঃ অডিটে না দেখিয়ে গোপন করা হয়। স্কাউট বাবদ মোট ৫৬,৫০০ চাঁদা থেকে পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়ে অবশিষ্ট টাকা গোপন করা হয়।বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অনুমোদনক্রমে প্রধান শিক্ষক ৫ হাজার টাকা হাতে রাখার নীতিমালা থাকার পরও ২০১৬ সালে ১২,২৬,৫৪৫ টাকা ব্যাংকে জমা না করে নগদ ব্যয় দেখিয়েছে যা সম্পূর্ণ বিধি পরিপন্থী। ২০১৭ সালের (জানু-জুন) সাধারণ আয়ের অংশ হতে ২,৯৪,৫০০ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে গোপন করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে স্কাউট বাবদ নেওয়া ৬১,৬০০ টাকা থেকে আয় দেখিয়েছে ২০,২০০ টাকা এবং ব্যয় দেখিয়েছে ১৭,৫০০ টাকা। অবশিষ্ট ৪১,৪০০ টাকা হিসেবের বাইরে রেখে আত্মসাৎ করেছে। পরিচালনা পরিষদের অনুমতিক্রমে ৫ হাজার টাকা হাতে রাখার নিয়ম থাকার পরও প্রধান শিক্ষক ২০১৭ সালের (জানু-জুন) ৩,৬৭,০০৮ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নগদ অর্থ ব্যয় দেখিয়েছে যা বিধি পরিপন্থি। এছাড়াও ২০১৪, ১৫ ও ১৬ সাল কিংবা তারও পূর্বে এসএসসি পাশকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের মূল সনদপত্র ও টি.সি প্রদানে আদায়কৃত কোন টাকার হিসেব দিতে পারেনি তারা।
তদন্ত প্রতিবেদনে সবমিলিয়ে আড়াই বছরে ৮,৩৩,৬৯৩ (আট লাখ তেত্রিশ হাজার ছয়শ তিরানব্বই) টাকা আত্মসাতের সত্য পাওয়া গেছে। এব্যাপার জানতে চাইলে হারবাং উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বরকত মিয়া বিস্তারিত তথ্য জেনে পত্রিকায় প্রতিবেদন করতে জানান। খবর নিয়ে আরো জানা যায়, হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সময় চলছিল বিশাল দুর্নীতি। ওই সময় অভিযোগ পাওয়ার পর তখনকার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ পরিক্ষার খাতা জব্দ করে দেখতে পায় তপন বাবুর উত্তরপত্রে সর্বাধিক উত্তরই ভুল ছিল কিন্তু নাম্বার পেয়েছেন শতভাগ। তপন বাবু ওই সময় ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ম্যানেজ করেন আর নিশ্চিত করেন প্রধান শিক্ষকের আসন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির দায় ঠেকিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার অক্ষত রাখতে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন বলেও জানা যায়। সরজমিনে জানতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক তপন কুমার ধরকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কক্সবাজার ডিসি অফিসে জরুরী কাজে গেছেন বলে জানান। অপর অফিস সহকারী মঞ্জুর আলম অভিযোগ স্বীকার করে জানান তার কাছ থেকে প্রাপ্য টাকাগুলো বিদ্যালয়ের এ্যকাউন্টে জমা করে দিচ্ছেন। এদিকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তপন কুমার ধরকে বিদ্যালয় থেকে অপসারণের জোর দাবী জানান অভিভাবক মন্ডলী, প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, এলাকার সচেতন লোকজনসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংঘটন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র ও হারবাং ছাত্র ফোরামের সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন ঐতিহ্যবাহী হারবাং স্কুলের এমন দূর্নীতি আর টাকা আত্মসাৎ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। অতিসত্বর দোষী ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান।