হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ 🙂

রোহিঙ্গারা প্রতিদিন ৫ লক্ষ কেজি (৫০০ মেট্রিক টন) জ¦ালানি কাঠ পোড়াচ্ছে উখিয়া-টেকনাফে। উদ্বেগজনক এ হিসাব বন বিভাগের। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদেরকে এ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারীভাবে অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানী কাঠ বা বিকল্প কোন জ্বালানী ত্রাণ হিসাবে দেয়া হয়নি। ফলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নিকটস্থ বন সাবাড় করে চলেছে। সদ্য অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে উখিয়া-টেকনাফের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমিতে। তারা বনভূমিতে বসবাসের পাশাপশি গাছ-বাঁশ কেটে তৈরী করছে ঘর-বাড়ি। আর কাঠ ব্যবহার করছে জ¦ালানীর কাজে। এতে উজাড় হচ্ছে উখিয়া-টেকনাফের বনাঞ্চল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে উখিয়া টেকনাফ থেকে হারিয়ে যাবে বনভূমি। মুছে যাবে সবুজ।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রতি দিন সকাল হলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কয়েক জন ত্রাণ সংগ্রহের কাজে থাকে। আর কয়েক জন জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের জন্য বনে ছুটে। ছোট-বড়, কচি চারা কোন কিছুই বাদ যাচ্ছেনা এদের হাত থেকে। এভাবে প্রদি দিনই হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু নিকটস্থ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হামলে পড়ছে। স্বল্প সংখ্যক নিরস্ত্র বন কর্মী হাজার হাজার উশৃংখল রোহিঙ্গাদের সামাল দিতে পারছেননা বলে জানা গেছে। স্থানীয় বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, রান্নার কাজে দৈনিক ৫ লক্ষ কেজি জ¦ালানি কাঠ পোড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। পুরাতন রোহিঙ্গাদের জ¦ালানির ব্যবস্থা থাকলেও নতুনদের সেই ব্যবস্থা নেই। এছাড়া যে আড়াই হাজার বনভূমিতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, সেখানে সামাজিক বনায়ন রয়েছে ১৫ হেক্টর। যা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা।

স্থানীয় সচেতন মহলের মতে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে জ¦ালানী দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদেরকে দ্রুত বনভূমি থেকে সরিয়ে কুতুপালং এর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হবে। আর পুনরায় বনায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিগত ভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু রান্না করার জন্য কোন জ¦ালানী কাঠ দেওয়া হচ্ছেনা। তাদের ঘরবাড়ি তৈরীর জন্য কোন গাছ-বাঁশ দেওয়া হচ্ছেনা। যার ফলে এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে বনায়ন থেকে। তাই নির্বিচারে পাহাড়ের গাছ-বাঁশ কেটে জ¦ালানীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৈরী করা হচ্ছে ঘরবাড়ি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল এরশাদ বলেন ‘রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা পাশ^বর্তী বন থেকেই জ¦ালানি কাঠ সংগ্রহ করছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর এ বিষয়টি সরকার অবগত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এটি সমাধান হবে’।

কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিন) আলী কবির বলেন ‘রোহিঙ্গারা যেভাবে বনের গাছপালা উজাড় করছে এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারে সবুজ আর থাকবেনা। রোহিঙ্গারা প্রতিদিন ৫ লক্ষ কেজি (৫০০ মেট্রিক টন) জ¦ালানি কাঠ পোড়াচ্ছে উখিয়া-টেকনাফে। অন্যান্য ত্রাণের সাথে জ¦ালানী কাঠ দেওয়ার পরার্মশ দেয়া দরকার। রোহিঙ্গাদের পাহাড় থেকে সরিয়ে ৩ হাজার একরের অস্থায়ী ক্যাম্প কুতুপালং এ নিয়ে আসা সম্পন্ন হলে বন ভূমি রোহিঙ্গা মুক্ত হবে। তদস্থলে পরবর্তী বর্ষায় নতুন করে বনায়ন করার পরিকল্পনা করা হবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠবে’। ##