নুসরাত পাইরিন,কক্সবাজার:

মিয়ানমারের সেনা ও উগ্র মগদের গনহত্য,ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৬ লাখ মানুষ।প্রানে বাঁচতে তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিওে অবস্থান করেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আশ্রিত নারীদের বিশাল অংশ হলো অন্তঃসত্ত¦া।আশ্চর্যের বিষয় হলো এসব রোহিঙ্গা নারীরা নাকি সারা বছরই গর্ভবতী থাকেন।এ কথা শুনে হয়তো অনেকেরই চোখ কপালে উঠে যেতে পারে।কিèতু রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেও এমন সত্যতা মিলেছে।অন্তঃসত্ত্বা ও নির্যাতিত নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,সেনা ও মগগোষ্ঠীর হাত থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে প্রায় সারা বছরই গর্ভধারণ অব্যাহত রাখেন রোহিঙ্গা নারীরা অনেকে আবার বলেছেন,পারিবারিক স্বাস্থাসেবা,শিক্ষা,বিনোদন ও সেনা নির্যাতনের ভয় ইত্যাদি কারনে তাদের প্রায় সারা বছরই গর্ভবতী থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে উঠে এসেছে বর্মি সেনাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে সারা বছরই নিজের গর্ভধারণে অব্যাহত রাখতেন রোহিঙ্গা নারীরা।এমনটাই দাবি তাদের।

সরেজমিন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালী,থ্যাংখালী,পালংখালী,টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্বাস্থাসেবা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়,প্রতিটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোতে অধিকাংশ নারী ও শিশু।এদের মধ্যে বড় একটি অংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী।এ ছাড়া স্বাস্থাসেবা কেন্দ্রগুলোতে মিলছে একই চিত্র।কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের তথ্যমতে,গত ২৫ আগস্ট থেকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩৫ জন।আর নবজাতক জন্ম নিয়েছে ৬৩৩ জন।এছাড়া নির্যাতিত নারী তেমন কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান করা না গেলেও তাদের সংখ্যা কয়েক হাজার।কক্সবাজারের সহকারী সিভিল সার্জন ডা.মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন,গর্ভধারণ কিংবা অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্য্ াপ্রতিনিয়ত বাড়ছে।চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বিভিন্ন অন্তঃসত্ত্বা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,সেনা নির্যাতনের ভয়ে নারীরা গর্ভধারণ করতেন।এ ছাড়া পাশাপাশি পারিবারিক স্বাস্থাসেবা,শিক্ষা ও বিনোদনের অভাব রয়েছে।ডা.মহিউদ্দিন আরু জানান,নির্যাতিত নারীদের নিয়ে আমরা তেমন কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না করলে ও কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়,তাদেও সংখ্যা কয়েক হাজার।নির্যাতিত নারীরা জানান,মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে তাদের ওপর।এছাড়া কালাবাহিনীর বৌদ্ধ সদস্যরাও সংঘবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যেত রোহিঙ্গা নারীদের।তবে অনেক সময়ই গর্ভবতী নারীদের রেহাই দিত না বর্মি সেনারা।তাই অনেক নারীই সম্ভ্রম বাচাঁতে সন্তান প্রসবের পরই আবার ও সন্তান নিতে চেষ্টা করতো।হতভাগ্য রোহিঙ্গা নারীরা না বলা এমন অনেক কথাই বলেছেন।সেনাদের নির্যাতন থেকে বাচঁতে রাখাইনের নাড়–পাড়া থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ৭ সন্তানের জননী অন্তঃসত্ত্বা আমিনা বেগম।তিনি বলেন,বর্মি সেনারা তাদের ওপর জুলুম ও অত্যাচার করেছে।সন্ধ্য ঘনিয়ে এলেই বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালাতো সেনারা।আতঙ্কে থাকতেন নারীরা।নারীদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালানো হত।আর এক্ষেত্রে সভ্রম বাচাঁনোর একমাত্র পথ ছিল গর্বধারণ।কারণ অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্যাম্পে নিতো না সেনারা,বলতেই শাড়ির আচঁল দিয়ে চোখ মোছেন আমিনা বেগম।ওই নারী আরও জানান,কেনো নারীদের রেহাই দিত না সেনারা।সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মায়ের বয়সী নারীও।অনেক নারীকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করে নাফ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।নারেিদও ওপর যৌন নির্যাতনের কথা ঘৃণাভরে জানালেন পুরুষ সদস্যরাও।রাখাইনের ম- ছালিয়াপাড়া থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১১ সন্তানের জনক সৈয়দ ইসলাম বলেন,সেনাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাচঁতে ঘন ঘন সন্তান নেন তার স্ত্রী।তার স্ত্রী ছাড়াও সেনাদের হাত থেকে বাচঁতে রাখাইনের প্রায় ঘরেই রয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারী।উখিয়া উপজেলা স্বাস্থা ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রের কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,নির্যাতনের শিকার নারীদের তালিকা করা এবং তাদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারণ অনেক নারী লজ্জা ও ভয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।