মানবজমিন :

সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায় ভারত। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকুক- এটিও প্রত্যাশা করে দেশটি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাত ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দীর্ঘ ৪৫ মিনিট বৈঠক করেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের শেষদিকে প্রায় ১০ মিনিটের মতো একান্তে কথা বলেন খালেদা জিয়া ও সুষমা স্বরাজ। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এ বিষয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা তুলে ধরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ সমস্যাগুলো শুনেছেন। তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারা (ভারত) চান যে, অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকুক এবং গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার নির্বাচিত হোক। এখানে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সেটাও তিনি আশা করেন। সকল দলের অংশগ্রহণের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, সেটা তিনি আশা করেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেটাও তিনি আশা করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উভয় দেশের যে সম্পর্ক তাকে আরো শক্তিশালী করবার কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, প্রতিবেশী হিসেবে ভারত চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। ভারত চায় বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈঠকে সুষমা স্বরাজ ভারতের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করে বলেছেন- বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে এটি তারা আশা করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন মূলত দুটি প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা যেটা আমাদের দেশে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি এই সংকট সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন যে, রোহিঙ্গা এই সমস্যার সমাধান হতে হবে। তাদেরকে সাময়িক আশ্রয় দেয়া হয়েছে কিন্তু তাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নিরাপদ একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। বিএনপি চায় মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হোক। এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রত্যাশার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন সুষমা স্বরাজ। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ভারতের তরফে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত আছে। গোটা বিশ্বও চাপ অব্যাহত রেখেছে। তারা আশা করে রোহিঙ্গারা নিরাপদ পরিবেশে নিজেদের দেশে ফিরতে সক্ষম হবেন। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতির মধ্যে সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফর করছেন। এছাড়া সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বৈঠকের ব্যাপারে দিল্লির আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়। ফলে এ সফরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের অব?্যাহত দমন-পীড়ন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশবাসীর প্রত্যাশার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়া সমপ্রতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সংঘটিত নানা ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে দেশের বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব?্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিবেশী হিসেবে আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের আন্তরিক ভূমিকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থাকার আহ্বান জানায় বিএনপি। সে সঙ্গে খালেদা জিয়া ও সুষমা স্বরাজ দুজনই দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকটি হয় ২০১৪ সালের ২৭শে জুন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫ জন সিনিয়র নেতা অংশ নেন। তারও আগে ২০১২ সালে ভারত সফরকালে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।