শাহেদ মিজান, সিবিএন:
‘মায়ানমারে গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত নাগরিক কমিশন’র সদস্যরা বলেছেন, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে। এই রকম নিষ্ঠুর অত্যাচার পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই হয়েছে। দু’দিনের তদন্ত শেষে দ্বিতীয় দফায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্যরা এই মন্তব্য করেন।
রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের ‘বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন’র লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নাগরিক কমিশনের সদস্য সচিব সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ,এইচ,এম শামসুদ্দিন মানিক।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে করা আনান কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের নজরে এসেছে। আনান কমিশনের প্রতিবেদনে স্বাভাবিক চলমান গণহত্যার উল্লেখ নেই, তবে প্রচ্ছন্ন সন্ত্রাসের উল্লেখ রয়েছে। আমাদের কমিশনের প্রতিবেদনে আনান কমিশনের সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বার্মার সরকার, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেচনার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।

তিনি আরো জানান, আরো ১০ হাজার রোহিঙ্গার জবানবন্দী সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বয়ান, বাংলাদেশ ও বার্মার বিভিন্ন সরকারি দলিলপত্রের ভিত্তিতে নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির শাহরিয়ার কবির, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, সাবেক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী সিকদার, মমতাজ লতিফ, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস।

এসয়ম কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, সরেজমিন তদন্তে আমরা দু’শতাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছি। তারা সবাই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সেভাবে প্রতিবেদন তৈরি করবো। আমাদের কমিশন কোনো চাপ প্রয়োগকারী বা লবিষ্ট সংস্থা নয়। তারপরও আমাদের বিশ্বাস আমাদের তদন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মানবতার অবমাননার চির অবসান চাই। তাই মানবতার হত্যাকারীদের বিচার চাই। একই সাথে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাই। শুধু বাংলাদেশ একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সন্তান আসীফ মুনীর, শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী চম্পা, মানবাধিকার কর্মী আরমা দত্ত, ব্যারিস্টার বিব বড়ুয়া, ব্যারিস্টার তাপস কুমার বল, শহীদ পরিবারের সন্তান তৌহিদ রেজা নূরসহ নাগরিক কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নাগরিক কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা ও কমিশনের সদস্য সচিব আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নেতেৃত্ব নাগরিক কমিশন দল শনিবার সারাদিন ও রোববার দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।