শাহেদ মিজান, সিবিএন:
নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে সাগরে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলায় অন্তত ৪০ গ্রাম। কুতুবদিয়ার, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, পেকুয়া ও সদরের গোমাতলীতে এসব গ্রাম তলিয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়ে সাগরের পানি। এতে সেখানে বসতবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। অনেক গ্রাম পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে চরম
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকে নি¤œচাপের প্রভাবে বাতাস শুরু থাকে। শনিবার সকাল থেকে তা বাড়তে থাকে। তা এক পর্যায়ে অনেকটা ঝড়ো হাওয়ার রূপতে। এতে সকালে জোয়ারে সাগরের পানি বেড়ে যায়। পানি বেড়ে গেলে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়িতে নয় গ্রাম, কুতুবদিয়া অন্তত ২০ গ্রাম, সদরের গোমাতলীতে আট গ্রাম ও পেকুয়ায় দু’গ্রামে সাগরের পানি ঢুকে পড়ে।
সূত্র মতে, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শনিবার দিনের জোয়ারের সময় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধের অংশ পানি ঢুকে ইউনিয়নের উত্তর সুতুরিয়া, শরইতলা, পন্ডিতেরডেইল ও বেগুনবনিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে ভারতঘোনাও প্লাবিত হয়েছে।
মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমুদুল্লাহ জানান, উত্তর রাজঘাট ও দক্ষিণ রাজঘাটের বেড়িবাঁড়ের ৭০ নং ফোল্ডার ভাঙা ছিলো। সাগরের পানি বেড়ে এই পয়েন্ট পানি ঢুকে উত্তর রাজঘাট, দক্ষিণ রাজঘাট, ফুলজানমোরা, বানিয়াকাটা প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দিয়েও পানি ঢুকেছে। এতে সাইট পাড়া প্লাবিত হয়েছে। স্লুইচ গেইট বন্ধ থাকায় পানি আটকে রয়েছে। এতে মানুষ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, চকরিয়ার মানিক চেয়ারম্যান ও মাতাবাড়ির মানিক ঠিকাদার ধলঘাটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ নেন। কিন্তু তারা ঠিক মতো কাজ করেনি এতে করে অল্প পানি বাড়লেই ভেঙে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগ করেও কাজ হয়নি।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের বৃহত্তর গোমাতলীর আট গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে গ্রামগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতে এসব গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চেয়ারম্যান জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর গোমাতলীর ৬ নম্বর ও ৮ নম্বর স্লুইচ গেইট এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়েবেড়িবাঁধ আর সংস্কার করা হয়নি। এই কারণে তখন থেকে পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড) অন্তত আটটি গ্রামের জোয়ার-ভাটা চলে আসছে। গ্রামগুলো হলো, উত্তর গোমাতলী (রাজঘাট), গাইট্টাখালী, রাবঢইন্ন্যাপাড়া, চরপাড়া, পূর্বগোমাতলী, কোনাপাড়া, আইছিন্নপাড়া, পশ্চিমগোমাতলী।
এর মধ্যে শনিবার বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করলে পানিতে বেড়ে গিয়ে ওইসব গ্রামগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরো জানান, পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার চিংড়িঘের। পান্দিবন্দি থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা এস.এম সৈয়দ উল্লাহ আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গোমাতলীর মানুষ পানির ভেতরে বসবাস করছে। জোয়ারের সময় পানি উঠে। আর ভাটার স ময় নেমে যায়। এভাবে সামাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এখানকার মানুষ জীবন যাপন করলেও কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের নজরদারি নেই।
পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহামদ বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সাগরে পানি বাড়ায় গোমাতলীর গ্রামগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রাতে পানি আরো বাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই লোকজন উঁচু এলাকায় সরে আসতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকবার লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অপরদিকে পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনা ও নতুন ঘোনা গ্রাম। এতে ওই এলাকার চিংড়ি ঘের ও কাচা বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার দুপুরের জোয়ারে বকশিয়া ঘোনা এলাকার উত্তর পাশে জহিরের দোকানের পেছনে ও পশ্চিম পাশে নেজামের বাড়ির সামনে বেড়িবাঁধে দুটি আলাদা অংশ ভেঙে জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে অত্যাধিক জোয়ারের কারণে বেড়িবাঁধে এ ভাঙন দেখা দেয়। কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে সাগরের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।
রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর বলেন, প্লাবিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হযেছে। বেড়িবাঁধের এসব অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের অবহেলার কারণে বকশিয়া ঘোনা এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল বশর চৌধুরী জানান, জোয়ারের পানি বাড়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে নিচু অন্তত ২০ গ্রামে পানি ঢুকেছে। অনেক স্থানে নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে বাঁধের অংশ। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ উজ্জল কান্তি পাল জানিয়েছেন, মৌসুমী নিম্নচাপটি ক্রমে পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থেকে থেমে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়েছে। থেমে থেমে হওয়ায় বৃষ্টিপাত কাউন্ট করার পর্যায়ে আসেনি। তবে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।