নুসরাত পাইরিন :
পাঁচ দিন আগে মিয়ানমারের বলিবাজার থেকে পালিয়ে এসেছেন হামিদা বেগম(৪৫)। সহিংসতার আগে হামিদার জীবন ছিল খুব সাধারণ। নিজেদের ৬ কানি(২৪০ শতক) জায়গাজমি রয়েছে। সেখানেই চাষবাস করে সংসার চালাতাম আমরা। নিজের বাড়িতে স্বামী ও ৮ সন্তানকে নিয়ে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল শান্তিতেই।
এখন সবকিছুই ত্যাগ করে আসতে হয়েছে হামিদাকে। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ১৯ অক্টোবর এ প্রতিবেদককে বলেছেন ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। বলেছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের লৌহমর্ষক,বর্বরোচিত হত্যাকান্ড এবং নিজের কষ্ট ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার কথা।
৪৫ বছরের হামিদা জানান, ‘আমার বাড়ি,চাল,আসবাবপত্র,গবাদিপশুসহ সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে ফিরলেও আর আমরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারব না। যখন সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে গুলি চালানো শুরু করল, আমরা তাড়াতাড়ি সন্তানদের একটু দূরে জঙ্গলে লুকিয়ে রেখে আসি। সন্তানরা জঙ্গলের ভেতর ভয় পাচ্ছিল। যখন বাড়ির কাছে গেলাম, দেখলাম ওই এলাকাতে অন্তত ৫০০ লোককে গুলি করে পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেখানে আমার স্বামীও ছিলেন।’
সেই ভয়ংকর সময়ের কথা মনে করে হামিদা আরও জানান, জঙ্গল থেকে দেখতে পেলাম সেনাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও কিছু বৌদ্ধ এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন মিলে রোহিঙ্গাদের প্রথমে দা-কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে যারা বেচে গিয়েছিলেন তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। পরে মৃতদেহগুলো একত্রিত করে বসতবাড়িসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
হামিদা বেগম জানান ‘জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলাম। সীমান্তের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পাঁচ দিন হাঁটলাম। আমরা খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। গাছের পাতা ছাড়া খাওয়ার আর কিছু ছিল না। ছিলনা পানিও। সন্তানরা বার বার খেতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমি তাদের কোনো খাবার মুখে তুলে দিতে পারিনি।’
উখিয়ার আমতলী সীমান্ত দিয়ে বিনা বাধাঁয় বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়ে হামিদা আরও জানান, এখানে আমরা অসহায়বোধ করি। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, কি খাব,কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করব, অবুঝ সন্তানদের নিয়ে জীবন বাচাঁব!