বিদেশ ডেস্ক: 
মিয়ানমারের এক সময়কার সামরিক শাসনবিরোধী সংবাদকর্মীদের পত্রিকা ইরাবতী জানিয়েছে, ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিকে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছে দেশটির সামরিক কর্তারা। সেই অনুযায়ী সুচিও তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন বলেও জানিয়েছে তারা। তবে ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার নিরাপত্তা শঙ্কার কথা অস্বীকার করেছে মিয়ানমার পুলিশ।
অং সান সু চি

দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের আইন ও বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান উ খিন মং উইনকে উদ্ধৃত করে ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, সু চি সেনাবাহিনীকে জানিয়েছেন তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। ‘আমি যতদূর জানি, সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টাকে নিরাপত্তা নিয়ে বরাবরই সতর্ক করে আসছে এবং তিনি আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।’ ইরাবতীকে বলেছেন উ খিন মং ইউন।

রবিবার সন্ধ্যায় এসিই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ক্রীড়ামন্ত্রীর ছেলে ফিও কো কো তিন্ত স্যান ও তার দুই কর্মীকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। মাদক ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে জনগণ। সেই প্রেক্ষাপটেই সু চিকে সেনাবাহিনী আবারও সতর্ক করেছে বলে ইরাবতীর খবরে জানানো হয়েছে। উ খিন মং উইন বলেন, ‘পুলিশ সু চি কে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। সু চিও বলেছেন তিনি আরও সতর্ক থাকবেন।

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, তিন্ত স্যানের ব্যাকপ্যাক থেকে ১২টি ডব্লিউওয়াই ট্যাবেলট, ১.৫ গ্রাম মেটাফেটামিন, দুইটি পিস্তল ও ৭২টি গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া নেপিডোতে এসিই হোটেলে তিন্ত স্যানের রুম থেকে আরও পাঁচটি পিস্তল ও ৮০৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়। একজন কর্মীর রুম থেকে উদ্ধার করা হয় ৯টি পিস্তল ও ৮৯২টি গুলি।

নেপিডো পুলিশ বাহিনীর প্রধান কর্নেল জাও খিন অং অবশ্য মনে করেন এই অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে সু চির নিরাপত্তার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। আমরা তার নিরাপত্তার পূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছি।’

অং সান সুচির ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা ও সরকারের মুখপাত্র ‍উ জাও তায় বলেছেন, ‘২০১৬ সালে আইএএসের হিটলিস্টে তার নাম আসার পর থেকেই তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তখনই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। নিয়োজিত রয়েছেন গোয়েন্দারাও।’

পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য উ থেইন সোয়ে সু চির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সু চির সাবেক এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আমি সু চি’র নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ তিনি নিজের নিরাপত্তার চেয়ে কাজকে বেশি গুরুত্ব দেন।’ তিনি বলেন, সরকারি কাজে গেলে সু চি বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু অন্যসময় নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। সু চিকে সবসময়ই সাবধান থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। উ থিন সোয়ে বলেন, ‘যেকোনও কাজেই তিনি বাইরে যান না কেন, তিনি আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই ২৪ ঘণ্টাই তার নিরাপত্তা বলয়ে থাকা উচিত এবং এটা তার মেনে নেওয়া উচিত।

নিম্নকক্ষের আইন ও বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান উ খিন মং উইন বলেন, ‘এর আগে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল নে উইনের নাতি অয় নে উইন ও কিয়াও নে উইনের ঘটনার মতো এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিলো।’ তিনি মন্তব্য করেন, ফিও কো কো সজ্ঞানেই হয়তো অস্ত্র রেখেছিলেন। কিন্তু তার মানে এই না যে তিনি কাউকে হত্যা করতে চেয়েছেন। কিন্তু এত অস্ত্র কেন ছিলো সেই বিষয়ে তদন্ত জরুরি।

ফিয়ো কো কো স্যান্তের বাবা ‍উ তিন্ত স্যান বর্তমানে চীনে রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, তিনি অস্ত্রের ব্যাপারে খুবই সৌখিন। প্রায়ই ফেসবুকে অস্ত্র নিয়ে ছবি দেন তিনি।