ডেস্ক নিউজ:
আগামী জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। দলটির নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক, জঙ্গি ইস্যু, চলমান রোহিঙ্গা সংকট ও প্রধান বিচারপতির ছুটিকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ অনেকটাই অস্বস্তিতে রয়েছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন দলটি প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রও বাড়বে। এসব মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ চিন্তিত হওয়ার প্রধান কারণ হলো, দলটি সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইতোমধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি তুলেছে। ফলে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সব দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তারা দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করবে। এ কারণে নির্বাচন কী করে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে সরকারের ভেতরে।

দেশে এই মুহূর্তের সবচেয়ে জটিল ইস্যু রোহিঙ্গা সংকট। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছে সরকার। স্বার্থান্বেষী মহল রোহিঙ্গাদের অপব্যবহার করতে পারে। এর ফলে এসব রোহিঙ্গা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের শঙ্কা, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও শেষপর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ৫ বছরও লাগতে পারে, ৫০ বছরও লাগতে পারে।’

দলের ভেতরে দুশ্চিন্তার বিষয়ে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘গত সাড়ে ৮ বছরে সরকারের বিরুদ্ধে কম ঝড়-ঝাপটা যায়নি। সেই ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। তবু দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এই অস্থিরতা থাকবে। এর মধ্যেই এগিয়ে যেতে হবে।’

এদিকে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন আশানুরূপ হচ্ছে না। ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জায়গা একপা এগুলে দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে নানা কারণে। এদিকে, বিএনপি কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। ফরে এই ইস্যুতেও সরকারের ভেতরে অস্বস্তি শুরু হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে বিপাকে রয়েছে সরকার।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের মতে, এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে একটি বিশেষ মহল অস্থিরতা তৈরির পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তিত। তবে, সরকার এটি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে।’

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কোনও কিছুকেই অস্বস্তি মনে করে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চক্রান্ত অব্যাহত আছে। এই চক্রান্ত মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা এগিয়ে এগিয়ে যাব।’