হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী : 
দেশব্যাপি আলোচিত রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের সেই জিন্নাত  আলীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন কক্সবাজার ৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
১৯ বছর বয়সই জিন্নাতের উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়ে দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয় জিন্নাত আলী।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো.ইসমাঈল নোমান জানিয়েছেন- সাংসদ কমলের নির্দেশে শুক্রবার সকালে জিন্নাত আলীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তার বাড়ি থেকে রামুর ওসমান ভবন এবং পরে কক্সবাজারের লালদীঘিরপাড়স্থ নিদমহলে নেওয়া হয়। সেখানেই সাংসদের সঙ্গে স্বাক্ষাত হয়।
এমপির বরাত দিয়ে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন- জিন্নাত আলীর পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা এবং প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন এমপি। এছাড়াও তার যাবতীয় বরণ পোষণের আশ্বাস দেন। এটি আমাদের প্রিয় নেতা কমলের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করি।
রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বলেন, জিন্নাত আলীকে সাংসদ কমলের একান্ত উদ্যেগে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য কক্সবাজারে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
জিন্নাত আলী কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের কৃষক আমির হামজার ছেলে।
ভোলা জেলার ৭ ফুট ৭ ইঞ্চির মোসলেউদ্দিনকে ছাড়িয়ে দেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষটি এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের জিন্নাত
জিন্নাত বলেন, তার অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে ঘরে ঢুকতে বা বিভিন্ন কাজ করতে সমস্যা হয়। তার পায়ের মাপের জুতা বাজারে না পাওয়ায় খালি পায়ে হাটতে হয়। রাস্তায় হাঁটা চলার সময় মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে তার খারাপ নয়, ভালোই লাগে।
জিন্নাত আলীর বড় সমস্যা শারীরিক দুর্বলতা, দুই হাঁটুতে ব্যথা। দারিদ্রের কারণে খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করতে পারেন না। তবে খুব খেতে ইচ্ছা করে তার।
মা শাহপুরা বেগম বলেল, ছেলে লম্বা হওয়ার কারণে খাদ্য জোগানও দিতে হচ্ছে বেশি। শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। মাথায় টিউমার, ডান পায়ে পচন ধরেছে। ডান পায়ের চেয়ে বাম পা দুই ইঞ্চি খাটো। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের পরিবারে ভিটে মাটি ছাড়া আর কোন অর্থ সম্পদও নেই।
বাবা আমির হামজা বলেন, ছেলে লম্বা হওয়ার কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়াও মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। রিক্সা, সিএনজি, মাইক্রো, জীপ গাড়িতে বসানো যায় না। চিকিৎসার জন্য গত এক বছর আগে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর ব্যয়বহুল টাকার প্রয়োজন হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে আবারও বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে জিন্নাতের শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটির বয়স কম হলেও সে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। পরিবারের পক্ষে তার শরীরের দুরাবস্থা নিয়ে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। মা-বাবা ও স্থানীয়া জিন্নাতের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা মানুষের কথা আছে। বাংলাদেশের বা বিশেষ কোনো দেশের সবচেয়ে লম্বা বা বেটে মানুষ সম্পর্কে আলাদা করে কোনো তথ্য গিনেজ বুকে নেই। গিনেজ বুকের তথ্য অনুসারে বর্তমান পৃথিবীর জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তিটির উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। এই লম্বা মানুষটি হলেন তুরস্কের সুলতান কোসেন। সবচেয়ে লম্বা নারী হলেন চীনের ইয়াও ডিফেন। তার উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর সবচেয়ে লম্বা ১০ জনের মধ্যে দশম ব্যক্তিটি কোরিয়ান রি মিয়ংহুন। তার উচ্চতা ৭ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি। সেখানে রামু উপজেলার গর্জনীয়ার বাসিন্দা জিন্নাত আলীর উচ্চতাও ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। অর্থাৎ গিনেজ বুকে স্থান পাওয়া ১০ নম্বরে যৌথভাবে স্থান পেতে পারে রামুর গর্জনিয়ার জিন্নাত।