আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
‘মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি তার দেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের ঘটনায় হতভম্ব এবং এই সমস্যা সমাধানে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে পরিস্থিতি যাতে আরো উত্তপ্ত না হয়ে উঠে সেজন্য আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’

শুক্রবার সুইজারল্যাণ্ডের রাজধানী জেনেভায় বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চির একজন উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।

‘যা দেখেছেন তাতে তিনি ভীত। এ ব্যাপারে তিনি গভীর সতর্ক আছেন। আমি জানি এই পরিস্থিতি সব সময় তৈরি হয় না। কিন্তু তিনি আসলেই সতর্ক আছেন’- নাম প্রকাশ না করার শর্তে সু চির ওই উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছে। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও রোহিঙ্গা মুসলিমরা রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছেন।

আক্রমণাত্মক অভিযানে লাখো রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার ঘটনায় মিয়ানমার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেনা অভিযান ঘিরে মিয়ানমারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ব্যাপারে একটি খসড়া প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ২৮ দেশভুক্ত সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। আগামী সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে এটি।

এদিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানের জেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা কারও জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ টুন টুন নাইং এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে মিয়ানমার টাইমসের এক প্রতিবেদনে বুধবার জানানো হয়েছে।

মিয়ানমার টাইমস বলছে, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে কয়েক বছরের উন্নয়নের পর দেশটির বর্তমান অর্থনীতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ভালো কোনো লক্ষণ নয়। নিষেধাজ্ঞা আরোপের অর্থ হচ্ছে কোনো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাধা দেয়া। তারা আমাদের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার ও দেশের সঠিক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে এবং এটা ভালো কিছু নয়’- বলেন ইউ তুন তুন নাইং।

মিয়ানমারের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে অর্থনীতির ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না। বাণিজ্য এবং সহযোগিতার মাত্রা কম থাকায় এতে কোনো সমস্যা হবে না।’

তবে জাতিগত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশটিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এটি দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’

মিয়ানমার টাইমস বলছে, মিয়ানমার এখনও গণতান্ত্রিক যাত্রা ও জাতীয় ঐক্যের পথে শুরুর দিকে রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দেশটির অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে। আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।