জিকির উল্লাহ জিকু :

আমরা দীর্ঘ দিন থেকে রাজনীতি করে আসছি। সবসময় অসহায়। দল ক্ষমতায় গেলেও বঞ্চিত, আবার দল বিরোধী দলে গেলেও নিপিড়ীত। আমাদের কোন ভাই আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত নাই তাই শেল্টার নামক আঁতাত ছাউনিও নাই। আমরা কোন দল থেকে ইনক্রুড নই বিধায় মনে প্রাণে দলকে ভালবাসি এবং আদর্শকে লালন করি। আমাদের নাই যে কোন ভাবে ক্ষমতা নামক চেয়ারের প্রত্যাশা। তবে একটাই তৃপ্তি আশা-নিরাশার মাঝে সুখে-দুঃখে বিএনপি। গতকাল বিকাল বেলা এমনসব আলোচনা-সমালোচনা করে কথাবার্তা বলছিলেন-মহেশখালী উপজেলা যুবদলের পদ প্রত্যাশী তৃণমূলের নেতা হিসেবে পরিচিত যুবনেতারা। কক্সবজার হোটেল প্যানোয়ার খোলা মাঠে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য (বর্তমানে শিলংয়ে অবস্থানরত) সালাহ উদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে আরো বলছিলেন-আজ যে দলের জন্য ভিনদেশে নির্বাসিত আপনি সেই দলের অনুসারী আমরা।তাই সালাহ উদ্দিন ভাই আপনার প্রতি অনুরোধ ‘আমাদের নেতা আমরা বানাতে চাই।’ওই সময় কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে এক সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, যুবদলের নেতৃত্ব পাওয়া আর সৌদি আরবের কফিল পাওয়া একই বিষয়। যার কফিল আছে তার প্রস্তাব যাচ্ছে। যার কফিল নাই তার কপালও নাই। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ আগষ্টে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। অনেকের মতে এমন প্রতিযোগিতামূলক স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ অতীত যুবদলে দেখা যায়নি। সকল আয়োজন সম্পন্ন হলেও রহস্যময় পুলিশি বাধায় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তৃণমূল কর্মীদের আশা ছিল প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের। জেলা নেতৃবৃন্দের চেষ্টাও বিফলে যায় পুলিশী বাধায়।পরে উপজেলা বিএনপি’র অফিসে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা হলেও নেতৃত্ব নির্ধারণের মালিক হয়ে যায় উপজেলা বিএনপি’র নেতৃত্বদ্বয় এবং জেলা যুবদল। বিএনপি’র সহশক্তি গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ সংগঠন যুবদলের পদ পেতে নেতাদের কাছে একাধিক লবিং শুরু হলে গ্রুপিংয়ে পরিণত হয়। গ্রুপের নাম হয়ে যায় জীবন গ্রুপ ও মরণ গ্রুপ। প্রভাব পড়ে উপজেলার বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বদ্বয়ের মাঝে। বলা চলে অনেকটা মৌনভাবে বিভক্ত। যার রেশ পড়ে যুবদলের বর্তমান নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতাদের মাঝে।এরই মাঝে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে জেলা নেতাদের কাছে সভাপতি ও সেক্রেটারী পদ পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে উভয় গ্রুপ।

বিভক্তির কারণ :

দলীয় সূত্রে জানা যায়, অতীতে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন নিয়ে বিএনপি’র সহবস্থান ও সহযোগিতার সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন ছিল বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বদ্বয়ের মাঝে। সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান উপজেলা ছাত্রদল একমুখী ও ব্যক্তিমুখি।অনুসন্ধানে জানাযায়, কোন কাউন্সিল বা কর্মীদের মতামত ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইউনিয়ন কমিটিও গঠন করতে পারেনি এমনকি এখনো পর্যন্ত তেমন কোন দৃশ্যমান সাংগঠনিক তৎপরতাও দেখাতে পারেনি।এক বিএনপি নেতার ভাষ্য মতে, সুপার ফ্লপ ‘চা’ কমিটি। কিন্তু যার লবিং দিয়ে কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী পদে অধিষ্ঠিত তাঁহারা তার কৃতজ্ঞতার আবদ্ধে থাকে দলটির নেতারা। তাই একপক্ষ আর ভুল করতে চায় না, অপর পক্ষ ছাত্রদলের এই রাজনৈতিক সুবিধা যুবদলেও রাখতে চায়।

পদ প্রত্যাশী নেতাদের অভিমত : সভাপতি প্রার্থী হাজী আমান উল্লাহ আমানের অভিমত জানতে চাইলে বলেন- ‘কমিটিকে কেন্দ্র করে শীর্ষ বিএনপি’র মাঝে দ্বন্দ এটা সত্য নয়। একটা রাজনৈতিক দলে প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দিতা থাকা স্বাভাবিক। যুবদলের অভিবাবক বিএনপি’র নেতারা যেভাবে চায় অথবা কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি হতে পারে বলে তার মত ব্যক্ত করেন।’ আরেক সভাপতি প্রার্থী এড.নছর উল্লাহ’র মতে-‘যুবদল আলাদা কোন সংগঠন নয়। যুবদলকে বিএনপি’র এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।তাই বিএনপি’র নেতারই ঠিক করবেন কোনটা ভাল হয়।তবে ব্যক্তিগতভাবে কোন বিভাজন চাইনা।’ পূর্বের সেক্রেটারী বর্তমানে সভাপতি প্রার্থী মোস্তফা কামাল প্রতিক্রিয়ায় বলেন-‘কাউন্সিলদের ভোটের মাধ্যমে হোক বা শীর্ষ নেতাদের আলোচনার মাধ্যমে হোক যেন যোগ্য ব্যক্তিকেই নির্বাচন করা হয়।’আগের কমিটির সাংগঠনিক বর্তমানে সেক্রেটারী প্রার্থী সাবের হোসেনের মতে-‘সবচেয়ে ভাল হয় ভোটের মাধ্যমে এতে তৃণমূল চাঙ্গা হবে এবং নেতাদের পক্ষ-বিপক্ষের দায় নিতে হবে না।’ সেক্রেটারী প্রার্থী সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুল করিম জয়ের ভাষ্য মতে,‘এখনতো মনে হয় কাউন্সিলরদের ভোটের অপশন নেই (জেলা যুবদলের সভাপতির মন্তব্য জানালে) পরে তিনি বলেন এটাই বেটার তবে ছাত্র নেতৃত্বের অধিকারী, দক্ষ সংগঠক, অতীতের মতে সফল যুবদল উপহার দিতে পারবে এমন নেতৃত্ব নির্বাচন করা তার দাবী।’ আনছারুল করিম টিটু তিনিও সেক্রেটারী প্রার্থী তাঁর মতে, কাউন্সিলর দের ভোটে হোক অথবা শীর্ষ নেতাদের আলোচনাতে হোক যোগ্য নেতৃত্বের সৃষ্টির লক্ষ্যে যে টা ভাল সেটা করুক জেলা যুবদল, ওয়েলকাম।’ সেক্রেটারী প্রার্থী হোসাইন মাসুমের মতে,আগের কমিটির প্রচুর অভিযোগে প্রায় ৭৭জন অনাস্থা জ্ঞাপন করে। ওই কমিটির মত যেন কমিটি ভবিষ্যতে না হয়। সাংগঠনি সম্পাদক প্রার্থী জসিম উদ্দিন সরওয়ারের মতে।যেভাবে সঠিক সেভাবে। অতীতের মত সফল,যোগ্য, নেতৃত্ব নির্বাচন করুক।’

তৃণমূল কর্মীদের অভিমত : তৃণমূলের অনেক যুবদলের কর্মীর সাথে কথা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাতার বাড়ির বাসিন্দা যুবদল কর্মী শামসুল আলমের কাছে জানতে চাইলে বলেন- ভোটের মাধ্যমে হলে সবচেয়ে ভাল হয়। সবাই রাজনীতি করে দলের নেতৃত্বের আশাও থাকরে পারে।সেই আশা ভাসিয়ে দেয়া ঠিক নয়। যদি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হয় তাহলে কারো পক্ষে-বিপক্ষের দায় নিতে হবে না নেতাদের। এবং কেউ পরাজিত হলে গ্রুপিং করার সুযোগও থাকবে না। তিনি হবেন সকলের নেতা। কালারমারছড়ার আমান উল্লাহ’র মতে- দ্বিধা-দ্বন্দ থাকলে যোগ্য নেতৃত্ব যদি বাছাই করতে সমস্যা হলে প্রয়োজনে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করুক। কুতুবজোমের শাহ আলম বাদশা মেম্বার বলেন-অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করে কমিটি দেন শীর্ষ নেতারা। সেটাও ঠিক। এতে ঝামেলা হলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনে দ্বিমত নাই।ছোট মহেশখালী যুবদলের নেতা ও উপজেলা যুবদলের কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোন ধরণের পকেট কমিটি বা ভাই কমিটি যাতে না হয় সে জন্য সাম্প্রতিক অতীতের শিক্ষা থেকে বলব- ‘সালাহ উদ্দিন ভাই, আমাদের নেতা আমরা ভোটে বানাতে চাই।স্বচ্ছ, যোগ্য এবং ত্যাগী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে আপনার অনুকরণে।’

জেলা নেতৃবৃন্দের অভিমত : জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল মহেশখালী উপজেলা যুবদলের কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কেন্দ্রিয় নেতারা পরপর সফরে আসছেন। তাই মহেশখালী উপজেলা যুবদল কমিটি নিয়ে তেমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি কয়েক দিনের মধ্যে নিব।জানতে চাইলে কিভাবে নিবেন উত্তরে তিনি বলেন,জেলা উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে আলোচনা করে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিব। অবশ্যই এখনো কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ওই বিষয়টিও বিবেচনাধীন আছে। সেক্রেটারী জিসান উদ্দিন জিসান বলেন,জেলা যুবদল ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।সাংগঠনি সম্পাদক আমীর আলী বলেন-যুবদল বিএনপি’র সংগঠন। তাই বিএনপি’র সাথে আলোচনা করে সঠিক, যোগ্য নেতা বাছাই হবে। আর সালাহ উদ্দিন আহমেদের দিকনির্দেশনা নিয়ে কমিটি চুড়ান্ত হবে।

প্রেরক :