বিশেষ প্রতিনিধি :

মাদক ও পতিতা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে কক্সবাজার শহরের পূর্ব কলাতলীর চন্দ্রিমা এলাকার ১০ হাজার মানুষ। শীর্ষ পতিতা ও মাদক ব্যবসায়ী তাহের, থানার সোর্স নামে পরিচিত সরওয়ার ও ভূতি নামের তিন জনের একটি শক্তিশালী মাদক-পতিতা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পুরো এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। সিন্ডিকেটটি এলাকাটিতে বেশ কয়েকটি বাসা ভাড়া করে তাতে যৌনকর্মী রেখে পতিতা ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সরওয়ার নামের থানার এক সোর্স সিন্ডিকেটে জড়িত থাকায় ভয়ে মানুষ মুখ খোলার সাহস করে না।

রবিবার বিকালে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তিন যৌন কর্মীসহ দালাল সরওয়ারকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজির হোসাইন তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর ধাওয়ায় সিন্ডিকেট প্রধান দালাল তাহের পালিয়ে গেলেও লোকজনের হাতে ধরা পড়ে নারী দালাল সেবেকা বেগম ভূতি। প্রায় এক ঘন্টা পর পুলিশ দ্বিতীয় দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে জনরোষ থেকে দালাল ভূতিকে উদ্ধার করে। এসময় ভূতি তিন মাসের মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া এবং এলাকায় থাকলে আর মাদক ও পতিতা ব্যবসা করবেনা বলে অঙ্গিকার করেন। পরে তাকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে ২ জন রোহিঙ্গা নারী বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সোলতান ঘটনা পুলিশকে অবহিত করেন। চেয়ারম্যান টিপু সোলতান জানান- সরওয়ার, তাহের ও ভূতি নামের তিন জনের একটি সিন্ডিকেট মাদক ও পতিতা ব্যবসার সাথে যুক্ত। তারা পুরো এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে অবহিত করেছি। এলাকাবাসী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন।’ এদিকে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শত শত এলাকাবাসীর সাথে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন অপরাধী পুরো এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। মাদক ও পতিতা ব্যবসার বিরুদ্ধে মানুষের গণজোয়ার দেখে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মানুষ এভাবে এগিয়ে আসলে সমাজ থেকে অপরাধ কমে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাবাসীর সাথে পুলিশ প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে। পুলিশ দুই মাদক ও পতিতা ব্যবসায়ীসহ ৫ জনকে আটক করেছে।’

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজির হোসাইন বলেন, ‘চন্দ্রিমা এলাকায় পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগে এলাকাবাসী ৪ নারীসহ ৫ জনকে আটক করে। পরে পুলিশ গিয়ে জনরোষ থেকে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’ আটককৃতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আটক দুই নারী রোহিঙ্গা কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খবর নেয়া হচেছ।’

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, শীর্ষ পতিতা ও মাদক ব্যবসায়ী তাহের, থানার সোর্স নামে পরিচিত সরওয়ার ও ভূতি নামের তিন জনের একটি শক্তিশালী মাদক-পতিতা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে চন্দ্রিমা এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা এলাকাটিতে বেশ কয়েকটি বাসা ভাড়া করে তাতে যৌনকর্মী রেখে পতিতা ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া শুধু ভাড়া বাসায় নয়, রাস্তায় এবং রাস্তার মোড়েও পতিতা ও মাদকের হাট বসানো হয়। এসব বাসায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরাধীরা জড়ো হয়। এতে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডও বেড়ে যায়। যার কারণে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা এর শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল এবং জীবনযাপনেও মারাত্ত্বক ব্যাঘাত ঘটছে। এলাকাবাসী এসব সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট সদস্য সরওয়ার পুলিশ ডেকে নিয়ে হয়রাণী করে। সরওয়ার থানার সোর্স হিসেবে পরিচিত হওয়ায় পুলিশকে বিভ্রান্ত করে থাকে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।