এফ এম সুমন, পেকুয়া:

চকরিয়া-পেকুয়া-মগনামা সড়কের পেকুয়া আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের পূর্বাংশে ভোলাইয়্যাঘোনা পয়েন্ট, মাতবর বাড়ী পয়েন্ট ও মগনামা ফুলতলা পয়েন্টে ‘স্থানের সাথে সামঞ্জস্যহীন’ ৩টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসি। চকরিয়া-পেকুয়া সড়কের চৌমুহনী থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে ওই ৩ স্থানে কালভার্ট ৩ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কালভার্ট দুটির ডিজাইন পরিবর্তন করে নির্মিতব্য কালভার্ট দুটি স্লুইচ গেইটে রূপান্তর করে তাতে পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য গেইট স্থাপনের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ সহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় থাকা এলাকার বাসিন্দারা। অন্যথায় এ দুটি কালভার্টের কারণে পেকুয়া সদরের ২ নং ওয়ার্ড, ভোলাইয়্যাঘোনা, উত্তর গোঁয়াখালী, পূর্ব গোঁয়াখালী, পশ্চীম বাইম্যাখালী, চলন্ত মার্কেট সহ বিস্তৃর্ণ এলাকার শত শত একর জমিতে চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যহত হবার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ওই এলাকাগুলো পানির নীচে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। এদিকে কালভার্ট দুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে ডিজাইন পরিবর্তন করে তাতে গেইট সংযোজনের জোর দাবি জানিয়েছে তারা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পেকুয়া বাজার থেকে ভোলা খালের পাশ ঘেষে সড়কটি সড়কটি মগনামা চলে গেছে। সড়কটিতে কমপক্ষে ৪-৫ টি কালভার্ট রয়েছে যেগুলো সঠিকভাবে করা হয়েছে। যাতে পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে বর্ষা মৌসুমে বন্যার হাত থেকে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে রক্ষার প্রয়োজনীয় গেইট ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নির্মিতব্য কালভার্ট দুটি কেন সম্পূর্ণ খোলা রেখে করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয় এলাকাবাসির। এদিকে গতকাল কালভার্টে তৈরীর স্থানে মানবন্ধন শেষে গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে ভোলাইয়্যাঘোনা এলাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। ভোলাইয়্যাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাহেদ ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার নেজাম উদ্দিন, ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিন, ছাত্রনেতা শহিদুল ইসলাম সাহেদ, ফারুক আজাদ প্রমূখ। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরও কোন কাজ না হওয়ায় তারা আন্দোলন করছেন।

স্থানিয় কৃষক মনির আহমদ, বর্গা চাষী আমির হোসেন, জমির মালিক আবদুল জলিল, সাদেক খান, ছৈয়দ আলম সহ আরো অনেকে জানান, “সড়কের ওই প্রান্তে জোয়ারভাটার ভোলা খাল। ওই নদীতে লোনা জল থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। আর এ প্রান্তে আমাদের ধান চাষের হাজার হাজার একর জমি। সড়কে খোলা কালভার্ট নির্মিত হলে আমাদের পুরো এলাকায় জোয়ার-ভাটার পানি ঢুকবে আর বের হবে। তাছাড়া ফসলি জমি ও ঘরবাড়ী সমসময় পানির নীচে তলিয়ে যাবে। লবণ পানি ঢুকলে কোন প্রকার ধান চাষ করা যাবেনা।” তারা বলেন, “ওই সড়কে আরো অনেক কালভার্ট রয়েছে সেগুলো কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে আর এগুলো কিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে তা দেখলেইতো বুঝা যায় যে নির্মতব্য কালভার্ট দুটো আমাদের ক্ষতি করবে। উন্নয়ন কাজ জনগণের লাভের জন্য হয় কিন্তু এ উন্নয়ন কাজ আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান র‌্যাব আরসির তত্বাবধায়ক মো: আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগ যেভাবে ডিজাইন করেছেন আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলাম স্থানীয় লোকজন তাদের ক্ষতির আশংকায় মানবন্ধন, সমাবেশ করছে। তাদের দাবির সাথে আমরাও একমত। কেননা এ সড়কে আগের যেসব কালভার্ট রয়েছে সবগুলেতে গেইট রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসউদুর রহমান কালভার্ট নিমাণের স্থান পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি স্থানীয়দের দাবি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভোলা খালের পাশ ঘেষে সড়কটির অবস্থান। সুতরাং এ সড়কে কালভার্ট করতে হলে উপকূলীয় এলাকার কথা মাথায় রেখেই ডিজাইন করা জরুরী ছিল। কিন্তু ওই সড়কে যে খোলা কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে বিস্তৃর্ণ এলাকা জোয়ার-ভাটায় পরিণত হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে ডিজাইন পরিবর্তন করে স্লুইচ গেইটটি করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব উল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয়দের দাবিত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সেটি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সড়ক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসউদুর রহমানের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কালভার্ট নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে স্থানীয়দের দাবির সত্যতা পেয়েছি। আশা করি আমার কর্তৃপক্ষ কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করতে সম্মত হবেন। আগে নির্মিত কালভার্ট গুলোর আদলে বর্তমান কালভার্টগুলোর ডিজাইন করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের স্লুইচ গেইটগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করেছে। আর নির্মিতব্য কালভার্টগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের নিজস্ব ডিজাইনে করা হয়েছে সেকারণে স্থানের সাথে সামঞ্জস্য হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্মিতব্য ৩ টি কালভার্টেই ডিজাইন পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।