ডেস্ক নিউজ:

সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাযুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে চলমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে জানিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, ‘আমার জানামতে এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি স্যান্ডার্স। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, তারা চলমান পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিষয়টি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উত্থাপন করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ২৫ আগস্ট একটি নিরাপত্তা চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) হামলার পর পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার খবর এবং ওই রাজ্যের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়সহ বেসামরিক জনগণের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ খবরগুলোর মধ্যে রয়েছে— নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ, পাশাপাশি এআরএসএ’র হামলা।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন দূতাবাস নিবিড়ভাবে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং রাখাইন রাজ্যে গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেসব খবর উঠে আসছে, সেগুলো যাচাই করাটাও কঠিন।
এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি। এছাড়া দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়েও আমরা প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলো ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি।’
রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এটা করতে গিয়ে যেন আইনের ব্যত্যয় না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই বিচারকাজ এমনভাবে পরিচালনর আহ্বান জানিয়েছে যেন এটি স্বচ্ছ হয় এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। এছাড়া, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বেসামরিক ব্যক্তিদের সংঘাতে জড়ানোকে প্রতিরোধ করে। মিয়ানমারের সব সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও তাদের সহায়তা করতে মিয়ানমার সরকারকে যেকোনও ধরনের সমর্থন দিতে মার্কিন দূতাবাস প্রস্তুত।’
ওই কর্মকর্তা জানান, ‘অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেটে’র ২৪ আগস্টের চূড়ান্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসা সুপারিশ পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সহিংসতা অব্যাহত থাকার পরিস্থিতিতে ওই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘কমিশনের প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদি যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। দারিদ্র্য, অনুন্নয়ন, সরকারি সেবা ও বিচারপ্রাপ্যতার ঘাটতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থানীয়দের উন্নততর চিকিৎসার মতো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ানমারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এছাড়া, রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে এবং ওই রাজ্যে মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিতেও মিয়ানমার সরকারকে যেকোনও ধরনের সহায়তা দেবে মার্কিন সরকার।’
রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, রাখাইন রাজ্যে রেড ক্রসের মাধ্যমে মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিতে মিয়ানমার সরকারের সম্মত হওয়াকে তারা স্বাগত জানান।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি মিয়ানমারের সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে কানাডাও। দেশটির কূটনীতি বিষয়ক সরকারি সংস্থা কানাডা গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত মাস থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার জের ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এক লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রতিবেদনে কানাডা গভীরভাগে উদ্বিগ্ন। আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি সব বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাতেও কানাডা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।