– ইস্পাহান 

প্রচন্ড নেশা ধরেছে।টানের মধ্যেই দু-তিনটে বেনসন শেষ হয়ে যাবে।রাত দুইটার কাছাকাছি বাজছে।রাস্তায় বের হয়ে কাউকেই তেমন একটা দেখতে পেলাম না।সগিরের দোকান এখনো খোলা।দোকানের দিদার নামের পিচ্ছিটার কাছ থেকে পাঁচটা বেনসন নিলাম।একটি সিগরেট ধরালাম।হাঁটতে হাঁটতে সিগরেটে টান দিতে ভালোই লাগছে।গন্তব্যের কোন ঠিক নেই।

একটু সামনে যেতেই দেখতে পেলাম দুজন ভদ্রলোক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।কাছাকাছি যেতেই চিনতে পারলাম।এ তো দেখি আমাদের হিমু দা আর দেব দা।আমাকে দেখে তারা ও ঘুরে দাঁড়ালেন।দেব দা কে হিমু দার সাথে দেখবো কখনো ভাবিনি।দেব দার পুনর্জন্ম হয়েছে।গতবার পার্বতী দিদির বিরহে মদের মধ্যে সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকতেন।এইবার ও একইভাবে পার্বতী নামের আরেকটা মেয়ের প্রেমে পড়েছেন।তবে গত জন্মে দেব দার প্রেম ব্যর্থ হলেও এইবারে আর ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।হিমু দা যেখানে আছে সেখানে সফল তো হতেই
হবে।পার্বতী মেয়েটি তো রাজি হবেই তার চৌদ্দ গোষ্ঠি মিলে দেব দা কে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিবে।

হিমু দা’ই প্রথম আমাকে সম্ভোধন করে বললেন,ইস্পাহান সাহেব…এত রাতে,কি ব্যাপার?আমি বললাম,এই তো একটু হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়েছি।আপনাকে আর দেব দা কে এক সাথে পেয়ে খুব ভালোই হলো।সিগরেট খেতে খেতে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়া যাবে।হিমু দা বলল,কই সিগরেট আছে নাকি?দাও তাহলে..

আমি হিমু দা আর দেব দা দুজন কে দুটো সিগারেট দিয়ে নিজেও একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেটে টান দিতে দিতে দেব দা কে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা দেব দা,ধরেন এইবার ও আপনি পার্বতী কে পেলেন না, তাহলে কি করবেন?দেব দা হাসতে হাসতে বললো,তুমিই বলো কি করা উচিত?আমি বললাম,আবার কি মদ খেতে খেতে নিজেকে শেষ করে ফেলবেন?এইবার হিমু দা হাসতে হাসতে বললেন,মদ খাবেনা।ইয়াবা ট্যাবলেট খাবে।শোনেছি তোমাদের কক্সবাজারের টেকনাফে নাকি এই ট্যাবলেট খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে?তাহলে তুমিই তো তোমার দেব দার জন্য ট্যাবলেটের সাপ্লাই দিতে পারবে।

আমি হিমু দা’র কথায় একটু হতাশ হলাম।ওনার মুখে এমন কথা শোনবো আশা করিনি।তবে,তিনি রহস্য পছন্দ করেন।হয়তোবা আমার সাথেও মজা করেছেন।

আমি পুনরায় দেব দা কে জিঞ্জেস করলাম,আচ্ছা আপনি যে গত জন্মে শুধু একটা মেয়ের জন্যই এতোটা পাগলামি করলেন,বিনিময়ে কি পেলেন?তাকে ও পেলেন না নিজেও শেষ হয়ে গেলেন।এইবার দেব দা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন বুঝলে ইস্পাহান,ভালোবাসার মানুষকে না পেলেও তার জন্যে হাজারো পাগলামিতে যা সুখ তা শুধুই যে করে সে বুঝে।তোমার হিমু দা’র কাছে শোনলাম,তুমি এই যুগের ছেলে হয়ে ও কোন একটা মেয়ের জন্যে নাকি কি সব পাগলামি করেছো?কথা সত্য নাকি!

এইবার আমি একটু লজ্জা পেলাম।শুকনো কাশি দিয়ে বললাম,আমি মোটেও এমন না।হিমু দা বানিয়ে বানিয়ে আপনাকে মিথ্যে বলেছেন।ওনার কাজই হলো,মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা।আমাদের দুজনকে থামিয়ে এইবার হিমু দা মহাপুরুষের মত বলতে শুরু করলেন,তোমরা দুজনেই আমার কাছ থেকে কিছুই শিখতে পারলেনা।নারীর সঙ্গ যখনই তোমরা ত্যাগ করবে তখনই সত্যিকারের পুরুষে রূপ ধারণ করতে পারবে।পৃথিবীকে জয় করবে।’যতদিন না নারীর মোহ ছাড়তে পারবেনা তোমাদের অন্তরে আসবেনা সুখের প্রশান্তি।নারীর স্পর্শ তোমাদের সামনের পথচলাকে থামিয়ে দিবে।আমি আর দেব দা দুজন দুজনের চোখ চাওয়াচাওয়ি করছি।বুঝতে পারলাম,হিমু দা’র নারী বিরুধী ভাষণ পুরো রাত শেষ হয়ে যাবে তবুও
থামবেনা।রুপা দিদির জন্যে আমার মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়।বেচারী হিমু দা কে কতোটা ভালোবাসে।আর হিমু দা……

ইস্পাহান
রামু,কক্সবাজার
ফোন-01837198432