ডেস্ক নিউজ:
নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি অাহতরা শারীরিকভাবে যতটুকু বিপর্যস্ত তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে ভীতিগ্রস্ত এবং অাতঙ্কিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। অাহতদের সবাই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। তাই তাদের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ট্রমা চিকিৎসা বা মানসিক অাঘাতকে কেটে উঠার জন্য পরবর্তী চিকিৎসা সেবা। এজন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টিমের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

একইসঙ্গে চিকিৎসাধীন সবাই জীবনাশঙ্কা মুক্ত বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসও লাগতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ শারীরিক ইনজুরি তাড়াতাড়ি সেরে উঠলেও মানসিক ট্রমায় ভোগার কারণে সুস্থ হতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

টিমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আঘাত পরবর্তী মানসিক ট্রমা বা চাপজনিত রোগ অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় পিটিএসডি রোগ একটি বিশেষ উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা। যা মানসিক আঘাত থেকে তৈরি হয়। জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ যেকোনো ঘটনা, মানসিক আঘাত বা ট্রমা, যেমন – যুদ্ধে বিধ্বস্ত, গাড়ি দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা যেকোনো ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এটি হতে পারে। এটি এমন একটি ঘটনা যা ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক সম্পূর্ণতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কারো পিটিএসডি হয় তখন তারা বিভিন্নভাবে ওই ঘটনাগুলোর মধ্যেই বসবাস করতে থাকে। এক্ষেত্রে যা ঘটে তা হল, স্মৃতিগুলো চোখে ভেসে ওঠা, দুঃসহ স্মৃতি, স্বপ্ন, বিচ্ছিন্ন শব্দ এবং গন্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা উদাসীনভাবে ওই স্মৃতিগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে এবং জীবনের প্রতি অনীহা তৈরি হয়, প্রায়ই তারা আংশিক ঘটনা মনে করতে পারে এবং অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে ও নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এরূপ দেখতে বিষন্নতার মতো মনে হলেও এটিই আসলে পিটিএসডি।

ভয়াবহ এ বিমান দুর্ঘটনার পর নেপাল থেকে গত তিনদিনে পাঁচ বাংলাদেশি ফিরেছে। বাকি দুজন অাগামীকাল আসার কথা। তবে দেশে অানা রোগীদের সার্বিক পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা মনে করছেন উপরোক্ত পিটিএসডির উপসর্গগুলো অাহতদের মধ্যেও কিছুটা বিরাজ করছে। তাই তারা মনে করছেন যথেষ্ট সচেতনতার সহিত এ ধরনের সমস্যায় চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে রোগীরা। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুুতি নিয়েছে ঢামেক।

১৩ সদস্যের মেডিকেল টিমের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, অাহতরা মোটামুটি শারীরিক দিক থেকে স্টেবল থাকলেও মানসিক বিষন্নতা ভুগছেন। এ ধরনের রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ৩-৬ সপ্তাহ সময় লাগে। অাবার পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও কখনও ২-৬ মাস পর্যন্তও লাগে। তবে এ ধরনের অসুস্থতায় পুরোপুরি সুস্থ হয় রোগী।

মানসিক ট্রমা কেটে উঠতে কতদিন সময় লাগবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে কিছু না বললেও মেডিকেল টিমের প্রধান ও ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে জানান, অাগামীকাল মেডিকেল টিমের চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করার পরই বলা যাবে তাদের কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন এবং সেটি কতদিন সময় লাগতে পারে। এ মেডিকেল টিম গঠনের মূল উদ্দেশ্য এটাই। তবে শারীরিক দিক থেকে তারা সবাই স্টেবল অাছে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণে অামাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।